আক্কেলপুর মহিলা কলেজ অ্যাডহক কমিটির নতুন সভাপতি কে পিটিয়ে বের করে দিলেন জনতা

আক্কেলপুর(জয়পুরহাট)প্রতিনিধি
Dec 14, 2024 - 17:22
 0  5
আক্কেলপুর মহিলা কলেজ অ্যাডহক কমিটির নতুন সভাপতি কে পিটিয়ে বের করে দিলেন জনতা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অ্যাডহক কমিটির নতুন সভাপতি কে পিটিয়ে কলেজ থেকে বের করে দিলেন এলাকাবাসী। এতে বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও বিদ্যেৎসাহী সদস্যসহ অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়েছেন।সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। 
গত বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে  মারধরের এ ঘটনা ঘটে। 
গত দেড় মাসে কলেজটির তিন দফায় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও বিদ্যেৎসাহী সদস্য পদে  রদবদল করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ঘন-ঘন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি-বিদ্যেৎসাহী সদস্য পদে রদবদলে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে কলেজের শিক্ষার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।
নতুন অ্যাডহক কমিটির  সভাপতি আইনজীবী মামদুদুর মোস্তাকিম নিশাত কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক। তিনি পাশের ক্ষেতলাল পৌরশহরের ফকির পাড়া মহল্লার বাসিন্দা। সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়া  রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরী সিকান্দার জয়পুরহাট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি আক্কেলপুর পৌরশহরের হাস্তাবসন্তপুর মহল্লার বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজের মনোনয়নকে পাশ কাটিয়ে গত ৩ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের  কলেজ পরির্দশক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত পত্রে আইনজীবী মো. মামদুদুর মোস্তাকিন নিশাতকে সভাপতি ও  নুর-ই আলম চৌধুরী পাভেলকে বিদ্যেৎসাহী সদস্য করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে কলেজে পত্র পাঠানো হয়। জাতীয় বিশ্বিবদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠনের ওই পত্র পেয়ে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিস্মিত হন। স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ছাত্রদল  নেতা রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন  চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বহিরাগত ব্যক্তি সভাপতি করায় আক্কেলপুর বিএনপির নেতা-কর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ হন। তারা অ্যাডহক কমিটির সভাপতি আইনজীবী মো. মামদুদুর মোস্তাকিন নিশাতকে প্রতিহত করার ঘোষনা দেন। এরপর গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরির্দশক (ভারপ্রাপ্ত)  মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত পত্রে  নুর-ই-আলম পাভেল চৌধুরীকে পরিবর্তন করে বিদ্যেৎসাহী সদস্য পদে মামুনুর রহমানকে মনোনয়ন দেয়। এতে তারা  আরও  ক্ষুব্ধ হন।  গত ৩০ অক্টোবর নতুন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোঃ মামদুদুর মোস্তাকিম নিশাত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে কলেজে আসছেন বলে প্রচার করা হয়। ওইদিন এলাকাবাসী ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা  কলেজের মূল ফটকে অবস্থান নেন। সভাপতি মামদুদুর মোস্তাকিম ওইদিন আর কলেজে আসেননি। তিনি কলেজে কোন সভাও করতে পারেননি। এরপর  গত ২০ নভেম্বর  তাদের মনোনয়ন পরিবর্তন করে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি পদে রিয়াদ  মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরী ওরফে সিকান্দার ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পদে হাফিজুর রশীদকে মনোনয়ন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  ১৮ দিনের মাথায় গত ৮ ডিসেম্বর  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের স্বাক্ষরিত পত্রে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পদেপরিবর্তন করে আবারও সভাপতি পদে আইনজীবী মামদুদুর মোস্তাকিম নিশাত আর বিদ্যেৎসাহী সদস্য  মামুনুর রহমান নিয়োগ দেয়। এনিয়ে এলাকাবাসী ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল। 
গতকাল দুপুর বারোটার দিকে আইনজীবী মোঃ মামদুদুর মোস্তাকিন নিশাত ও বিদ্যেৎসাহী সদস্যসহ কয়েকজন কে নিয়ে কলেজে আসেন। তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্রে প্রবেশ করেন। নতুন অ্যাডহক কমিটি ও বিদ্যেৎসাহী সদস্য পরিচয় পর্ব শেষে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এমন সময় এলাকাবাসী ও পৌর বিএনপির আহবায়ক আলমগীর চৌধুরী বাদশা ও তার ছোট ভাই অ্যাডহক কমিটির সভাপতি রিয়াদ মোঃ জিয়াউদ্দিন চৌধুরী দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঢোকেন। 
এনিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষের ভেতরে দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। ভেতর থেকে অধ্যক্ষের কক্ষের দরজা বন্ধ করে মারধর করা হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে দুই পক্ষকে বের করে আনেন। খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট মুনিরা সুলতানা কলেজে ছুটে আসেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা  কলেজের ভেতর থেকে দুই পক্ষের লোকজনদেন বের দেন। এরপর ডিগ্রি পরীক্ষা শুরু হয়।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবিদা সুলতানা বলেন, আমি আমার কক্ষে বসে কাজ করছিলাম। এসময়  কয়েক জন ব্যক্তি আমার কক্ষে আসেন। একজন নিজেকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি আইনজীবী মোঃ মামদুদুর মোস্তাকিন নিশাত ও অন্যজন বিদ্যেৎসাহী মামুনুর রহমান পরিচয় দেন। আমরা আলাপচারিতা করছিলমাম। এসময় আরেকটি পক্ষ আমার কক্ষে ঢোকে পড়ে। তখন হট্টগোল ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান অ্যাডহক কমিটি সভাপতি কেউ মেনে নিচ্ছেন না। কলেজ থেকেও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ঘন-ঘন অ্যাডহক কমিটি পরির্বতনে কলেজের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
অ্যাডহক কমিটির মোঃ মামদুদুর মোস্তকিন নিশাত বলেন, নতুন সভাপতি হওয়ার পর কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষক কর্মচারীদের সাক্ষাত করতে এসেছিলাম। আলমগীর চৌধুরী বাদশা ও তার ছোট ভাই অ্যাডহক কমিটির সাবেক সভাপতি রিয়াদ মোঃ জিয়াউদ্দিন চৌধুরী সিকান্দার  অধ্যক্ষের কক্ষে ঢোকে আমাদেরকে মারধর করেছেন। এতে আমারদের ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। এঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
  পৌর বিএনপির আহবায়ক আলমগীর চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক শ্রম দিয়ে কলেজটি এমপিও ভূক্ত করেছি। বহিরাগত কাউকে আমরা কলেজের সভাপতি মানব না। তিনি মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মুনিরা সুলতানা বলেন, কলেজ অ্যাডহক কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের হট্টগোল ও মারধর ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং যথাসময়ে পরিক্ষা শুরু হয়েছে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, মহিলা কলেজের ঘটনায় কোন পক্ষই থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow