আজ সাংবাদিক আবু সাঈদ খানের ৭২তম জন্মদিন
আজ বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দেশবরেণ্য সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক আবু সাঈদ খানের ৭২তম জন্মদিন। খ্যাতিমান এই কৃতিপুরুষ ১৯৫২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলার বিভাগদী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে সামরিক ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দেলন সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সময়ের সাহসী এই সন্তান বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির জগতে আত্মনিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে চলেছেন।
প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির এই পুরোধা বর্তমানে সমাজ, দেশ ও রাজনীতির সমসাময়িক ঘটনাবলীর তাৎক্ষণিক সময়োপযোগী বিশ্লেষন পারঙ্গমতার হাত ধরে অন্যতম মিডিয়া ব্যাক্তিত্বের আসনে অধীষ্ঠিত। তঁার দাদা শমসের আলী খান ছিলেন কংগ্রেস ও কৃষকপ্রজা পার্টির স্থানীয় নেতা। বাবা আবদুর রশীদ খান ছিলেন স্কুল শিক্ষক ও সমাজসেবী। মা রিজিয়া খান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের দায়িত্ব পালন সহ সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তাদের বাড়িটি পরিনত হয়েছিল সংখ্যালঘুদের আশ্রয় কেন্দ্র ও মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। পরিবারের সব সদস্যই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।
আবু সাঈদ খান ১৯৬৭ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে যঁারা ফরিদপুরের ছাত্র-গণআন্দোলনে অগ্রনী ছিলেন, তিনি তঁাদের অন্যতম। ১৯৭১ সালে তিনি ফরিদপুরে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ফরিদপুর পতনের পর তিনি ভারত যান এবং চাকুলিয়া প্রশিক্ষন কেন্দ্রে উচ্চতর প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা দলের সঙ্গে দেশে প্রবেশ করতে পারেন না। পরে কল্যানী যুব শিবীর পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তঁার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক উত্তাল পদ্মা।
স্বাধীনতা-উত্তর আবু সাঈদ খান জাসদে যোগ দেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন জাসদ রাজনীতিতে সক্রিয়। এই সময়ে তিনি জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের ফরিদপুর জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাসদের ফরিদপুর জেলার সাধারন সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও সমাজসেবা সম্পাদক এবং সংযোগী সংগঠনসমূহের গুরুত্বপূর্ন পদে ছিলেন।
তিনি ‘৯০এর গনঅভ্যুত্থান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জিয়া ও এরশাদ আমলে তিন বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের বিচারের জন্য গণআদালত গঠনের জন্য শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ যে ২০জন সংগঠককে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল, তিনি তাদের অন্যতম।
১৯৯৬ সালে আবু সাঈদ খান প্রত্যক্ষ রাজনীতি ছেড়ে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। শুরু হয় তার জীবনের আরেক অধ্যায়। তিনি সমকালের সহকারী সম্পাদক, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও উপসম্পাদদের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি দৈনিক মানবজমিনের সহকারী সম্পাদক এবং প্রতিদিনের সংবাদের সম্পাদক ছিলেন।
তিনি নিয়মিত কলাম লিখছেন এবং টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিচ্ছেন। নিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে তিনি সমাদৃত। ব্যস্ততার মাঝেও তিনি মুক্তিযুদ্ধ, সমাজ ও রাজনীত নিয়ে গবেষণা করছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তঁার প্রকাশিত গ্রন্থ ফিরে দেখা একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর ও মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ফরিদপুর। এর বাইরে ‘বিকল্প চিন্তা বিকল্প রাজনীতি’, উপেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ উপেক্ষিত জনগণ, রাজনীতির তিন অধ্যায়, স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি, জাপানদর্শন, বোবা পাহাড়ের কান্না বিশেষভাবে আলোচিত। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২০টি। সাংবাদিকতা ও লেখালেখির পাশাপাশি তিনি আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার আন্দোলনসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত।
শিক্ষানুরাগী আবু সাঈদ খান ছাত্রজীবন থেকে শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছেন। ছাত্রজীবনে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আশেপাশের স্কুলে ক্লাস নিতেন। বয়স্কদের লেখাপড়া শেখাতেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর গ্রামে গিয়ে গড়ে তোলেন বিভাগদী নবীন ক্লাব। সেই ক্লাব ঘরেই বিভাগদী হাই স্কুলের গোড়াপত্তন হয়। সম্প্রতি তিনি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও টকশো থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে বিভাগদী রিজিয়া রশীদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিভাগদী শহীদস্মৃতি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্কুলটি সরকারীকরন হয়েছে। কলেজটি এমপিও-র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য অনেক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন বলে তিনি জানান।
What's Your Reaction?