কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির গুঞ্জন
কুষ্টিয়া জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আল মামুন তালুকদার। ২০২৩ সালের ৩ আগষ্ট জেলার শিক্ষা বিভাগের সর্বোচ্চ পদটিতে যোগদান করেন তিনি। যোগদানের পর থেকে শিক্ষা বিভাগের এই কর্তা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলার শিক্ষা বিভাগের এই কর্তা ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে একাধিক বার তথ্য চাওয়া হলেও মেলেনি কোন তথ্য। বাধ্য হয়ে প্রতিবেদক দল সরকারি বিধি মোতাবেক তথ্য ফর্মে আবেদন করেন। এরপরও নানা তালবাহানায় সময় ক্ষেপন করেন তিনি। এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দেননি তিনি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও দপ্তর থেকে ঐ কর্তা (শিক্ষা অফিসার) দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদক দল যে তথ্য চেয়ে আবেদন করেছিলেন তার মূল অংশ উল্লেখ করা হলো। প্রশ্নগুলো- গত ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় মোট কত জন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও (MPD) ভুক্তির জন্য আবেদন করেছে? কোন উপজেলা থেকে কতজন শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করেছেন? আবেদনকারীদের মধ্যে কতজন আবেদনকারীর আবেদন আপনার দপ্তর থেকে সুপারিশ করে ডিজি অফিসে পাঠানো হয়েছে? কোন আবেদনকারীর আবেদন স্বাতিল হয়েছে কি-না? বাতিল হয়ে থাকলে তার কারণ কি?"।
এদিকে সরকারি বিধি মোতাবেক গত ২ জানুয়ারি তথ্য ফর্মে আবেদন করার পরও তথ্য না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকরা। এ বিষয়ে তথ্য কমিশনে আপিল করার কথা জানিয়েছেন তারা।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে জানা যায়, জেলার কুমারখালী উপজেলাধীন বিভি- ন্ন বিদ্যালয় থেকে বিধি মোতাবেক বেশকিছু শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও করণের ফাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেওয়া হয়। জমাকৃত ফাইলগুলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরণ করা হয়। ফাইলগুলোর মধ্যে জেলা শিক্ষা অফিসার টাকা না পেয়ে বেশকিছু ফাইল আটকে দেন। এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারীদের এই ফাইলগুলো পাঠানোর শেষ দিন ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমারখালী উপজেলার দুইটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, এই শিক্ষা অফিসার ঘুষ না পেলে শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য ডিজি প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন। তিনি টাকা না পাওয়ায় সব ঠিক থাকা সত্ত্বেও তাদের স্কুলের দুই শিক্ষকের এমপিও ফাইল ডিজি অফিসে পাঠাননি। তিনি ফাইল প্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে ফাইল ডিজি অফিসে পাঠানোর কথা থাকলেও তিনি ফাইল না পাঠিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। এতে করে আমাদের ফাইল আরো দুই মাস আটকে থাকলো। দুই মাস আমাদের বেতন হবে না। তিনি ওপেন টাকা নিয়েও কাজ করেন না, এমন নজিরও আছে।
বিষয়টি নিয়ে কুমারখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী এজাজ কায়সার জানান, ১০১ জন শিক্ষক কর্মচারী এমপিও ফাইল জমা দিয়েছিলেন। এরমধ্যে ১৩ টা ফাইলে বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় পাঠানো হয়নি। অন্যগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর ফাইল পাঠানোর শেষ দিন ছিল। ইতিপূর্বে গত ৩১ জানুয়ারি জেলা শিক্ষা
অফিসার মোঃ আল মামুন তালুকদারের সাথে সরাসরি সাক্ষাতের জন্য গেলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। সেসময় বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন- তথ্যপ্রাপ্তির আবেদন করলে তথ্য পাবেন। যেটা দেওয়া সম্ভব সেটা পাবেন আর যেটা দেওয়া সম্ভব না সেটা পাবেন না। থানা এলাকাগুলো থেকে যে আবেদনগুলো আসে সেগুলো আমরা খুলনাতে ফরওয়ার্ড করে দেই। যাদের ত্রুটি থাকে তাদের ত্রুটি সংশোধন করে পরবর্তী মাসে পুনরায় আবেদন করতে বলি। আমাদের কাছে কোনটাই থাকে না। ফুল তথ্য নিতে চাইলে "ইএমআইএস" সেলে আবেদন করতে হবে। কথাটির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদক তাকে কথাগুলো লিখিত আকারে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনটি রেখে দেন।
What's Your Reaction?