কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ 

পুলক সরকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি
Aug 14, 2024 - 21:31
Aug 14, 2024 - 21:46
 0  7
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ 

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদেরও প্রতিষ্ঠানের ভেতরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালের দিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খানের সভাপতিত্বে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভবিষ্যতে মেডিকেল কলেজের কোনো শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার খোঁজ মিললে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

এর আগে মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ বরাবর ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের আবেদন জানানো হয়। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকা প্রসঙ্গে নবম থেকে ১৩তম ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা ও কুষমেকের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৬ দফার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ভোটের মাধ্যমে অভিমত দেন। সেখানে ৩৫৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫৪ জন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ মতামত দেন।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের আবেদনের প্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া ওই বৈঠকে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো নোটিশ আকারে প্রকাশ করা হবে।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বেশির ভাগ দাবি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আমরা চাই ক্যাম্পাসে যেন আর রাজনীতির কালো থাবা ফিরে না আসে। কলেজে একাডেমিকভাবে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ গঠন করা হবে। যা দলীয় ছাত্র রাজনীতির প্রভাব মুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদেরও প্রতিষ্ঠানের ভেতরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আকরামুজ্জামান (মিন্টু) বলেন, ছাত্রদের বৈষম্য সংস্কার আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা উঠেছিল। আমরা শিক্ষকরা তাদের এই যৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে নই। বরং ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত হলেই ছেলেরা তাদের পড়াশোনা পরিচালনা করতে পারবে। এই ক্যাম্পাসের শিক্ষকেরাও সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত আছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং তার অন্তর্গত রিফাত-মিলন ছাত্রাবাস ও রহিমা আফসার ছাত্রীনিবাসে স্থায়ীভাবে সকল প্রকার দলীয় লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন এবং অন্যান্য) নিষিদ্ধ করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে যথাবিহিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার গ্রহণ করতে হবে। তবে ক্যাম্পাসের বাইরে রাজনৈতিক প্রকাশ এবং কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কোনো রূপ বাধা প্রদান করা যাবে না। ইতিপূর্বে ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল ব্যক্তির প্রতি কোনোরূপ বিরূপ মনোভাব পোষণ করা হবে না, এই মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে। ক্যাম্পাসের সকল রাজনৈতিক ক্লাব, সংগঠনে কোনোরূপ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা যাবে না। এই বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে পাসকৃত সিদ্ধান্ত লিগ্যাল নোটিশ আকারে প্রকাশ করাসহ ১২ দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ১৪ নেতা-কর্মী স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। ১৬ সদস্যের কমিটির মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য সদস্যরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস এবং অলিখিতভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow