কেএনএফের হুমকি: বান্দরবানে দুই উপজেলায় বাস চলাচল বন্ধ
পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের হুমকির কারণে বান্দরবান সদর থেকে রুমা ও থানচি উপজেলার যাত্রীবাস,মাহেন্দ্রা, বি-৭টি (চাঁন্দের গাড়ি) চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। রোববার সকালে রুমা ও থানচি উপজেলার বাস কাউন্টারে লাইনম্যানদের ফোন করে যানবহন চলাচল না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে জানান পরিবহন শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুমা উপজেলার পরিবহন শ্রমিকরা জানান, রোববার সকালে সদরঘাট এলাকা থেকে বাস কাউন্টারে যাচ্ছিল লাইনম্যান লুপ্রু মারমা। তাকে রাস্তায় পেয়ে মারধর করেছে কেএনএফ সদস্যরা। পরে লুপ্রু মারমাকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোন বাস গাড়ি চলাচল না করার জন্য হুমকি দিয়ে যায় তারা। ইতিমধ্যে আমাদের একজনকে মারধর করেছে। আবার হঠাৎ করে কী করে বসে-এই ভয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী বাস ও মাহেন্দ্রা, বি-৭টি চাঁন্দের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুমা-বান্দরবান সড়কের হুমকির খবর পেয়ে অনেকেই মোটরসাইকেল চলাচল পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। তবে জরুরী প্রয়োজনে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মোটর সাইকেল বান্দরবান এবং চিম্বুক ১২ মাইল এলাকা থেকে রুমা সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত চলাচল করে। পর্যটকবাহী কোন যানবহন ও চলাচল করে না।
এর আগেও ১৪ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলার রিজুক ঝরণা পাড়ার এক যুবককে গুলি করার অভিযোগ উঠে কেএনএফের বিরুদ্ধে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পরের দিন রুমা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে স্থানীয় লোকজন। সেখানে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানকেও দেখা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে থানচি উপজেলায় বাস কাউন্টারে লাইনম্যান মংসিনু মারমা জানান, সকালে কেএনএফ পরিচয় দিয়ে বাস চলাচল না করার জন্য হুমকি প্রদান করা হয়। অমান্য করে কেউ গাড়ি চালালে পরিণতি ভাল হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়। শুধু বাস নয়, থানচি-বান্দরবান সড়কে কোন মোটর সাইকেল, মাহেন্দ্রা বি-৭টি চাঁন্দের গাড়ি, মাহেন্দ্রা থ্রী হুলার পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে না বলে দেওয়া হয়।
মংসিংনু মারমা বলেন, তারা আজকে সকালে (কেএনএফ) প্রথম বাস ছাড়া মুর্হুতে হঠাৎ ফোন করে জানায়, আমাদের রুমা উপজেলার তিন চেয়ারম্যানকে দরকার। রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান, পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান ও রুমা উপজেলা চেয়ারম্যানদের পেলে তখন সব গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এখন আমরাও বাড়ি যেতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছি। সকালে রুমা বাস কাউন্টারে আমাদের এক লাইনম্যানকেও মারধর করেছে তারা।
থানচি বাস স্টেশনের গাড়ি চালক মোহামম্দ নুর আলম বলেন, সকাল ৭টায় আমার গাড়ি প্রথম ট্রিপ ছিল। সব যাত্রী এসে গাড়িতে উঠে গেছে। প্রথম ট্রিপ হিসেবে যাত্রীও ভরা ছিল। গাড়ি ছাড়বো ওই মূর্হুতে লাইনম্যান ফোন করে বলে, গাড়ি ছাড়া যাবে না। কেএনএফ নামে একটি সংগঠন গাড়ি না ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়েছে।
‘লাইনম্যানের মাধ্যমে আমরা অনুরোধ করছিলাম, যেহেতু যাত্রীরা এসে গেছে। গাড়িতেও উঠে গেছে। প্রথম ট্রিপ হিসেবে একবার যাত্রী নিয়ে চলে যাক। কোন কাজ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ষ্টেশনে সাইড করে রাখলাম।
খবর পেয়ে সকালে থানচি বাস ষ্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। ষ্টেশনে শিডিউল অনুযায়ী ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কোন চালক ও চালকের সহকারী কেউ নেই বাসে। যাত্রীরা ষ্টেশনে এসে বাস চলাচল বন্ধের খবর পেয়ে চলে যাচ্ছে। তবে বেশির ভাগ যাত্রীরা ছিল স্থানীয় লোকজন। কোন পর্যটক দেখা যায়নি বাস কাউন্টারে।
যানবহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রুমা ইউএনও সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, রুমা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল পক্ষ নিয়ে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, বম সোস্যাল কাউন্সিল ও মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিংয়ে বসছি। আশা করি, সমঝোতা হলে শিগগির গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
এ বিষয়ে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ মামুন বলেন, সকালে পরিবহন শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি জানিয়েছে। এখনও পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে।
What's Your Reaction?