কেমন যাচ্ছে খোকসার আইন-শৃঙ্খলা!
তবে কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপরতা বেড়েছে? এমন ভাবনা এখন কুষ্টিয়া জেলার বৈচিত্র্যময় জনবসতিপূর্ণ উপজেলা খোকসার মানুষের মধ্যে।
১১৫.৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলায় বসবাসরত মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় দেড় লাখ অনুমেয়। সেই হিসাবে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে উপজেলাটিতে বসবাস করেন প্রায় তের'শ মানুষ। দেশের অনান্য উপজেলার লোকালয়ের মতো এখানেও বেপরোয়া চলে আসছে চুরি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা সহ নানা অপরাধ প্রবণতা।
চলতি বছর জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলন ও পরিবর্তিত সরকারে দীর্ঘদিনের বরফ গলেছে মানুষের নতুন করে ভাবনার। মানুষের মধ্যে প্রবণতা বেড়েছে নাগরিক অধিকার আদায় করে নেয়ার, প্রবণতা বেড়েছে ন্যায্য কথা বলারও। বিপরীতে নড়েচড়ে বসেছে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সকল দপ্তর ও দাপ্তরিক দায়িত্বশীলরাও। সেই ধারায় সবার প্রচেষ্টা যেন সুন্দর বাংলাদেশের নিরাপদ একখণ্ড খোকসার।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পলায়নের পর দেশে নানা ঘটনাক্রমে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে জননিরাপত্তা চরম ভাবে বিঘ্নিত হয়। সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে আঁধার ঘরের কালোবাজারি আর সমাজচ্যুত চোর-ছিনতাইকারীরা। ১ টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের নানা শ্রেণী-পেশার কয়েকশো মানুষের সাথে কথা বলে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে এমন মন্তব্যই জানা গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর দেশের অন্যান্য থানার মতো কাজে ফেরে খোকসা থানা পুলিশ। গত ১০ আগস্ট খোকসা থানা পুলিশ কাজে ফিরলেও প্রভাব রাখতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে। পরে জেলা পুলিশ ও সকল থানায় কর্মকর্তা পরিবর্তন হলে অন্যান্য থানার মতো কর্মোদ্যম ফিরতে শুরু করে খোকসা থানা। নাগরিকের আস্থা ফিরতে শুরু করে পুলিশে।
খোকসা সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, আগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়েছে। তবে মাদক-সন্ত্রাসে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন দরকার।
শোমসপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পৌর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো: শরিফুজ্জান বিল্লু জানান, মানুষের মধ্যে অধিকার সচেতনতা বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আইনের প্রয়োগে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। কোনো শক্তি আইনের ওপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কম। বর্তমানে খোকসার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ উন্নত।
মাই টিভি ও যুগান্তর প্রতিনিধি লিপু খন্দকার বলেন, জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে পর্যাপ্ত জনবল এবং গাড়ি প্রয়োজন। মাঠে কাজ করা পুলিশের সাহস বাড়ানো দরকার। ধাপেধাপে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
খোকসা উপজেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আমজাদ আলী জানান, রাজনীতির নাম ভাঙ্গিয়ে খোকসায় কোথাও কোনো মাদক-সন্ত্রাস চাঁদাবাজির সুযোগ দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার জন্য আমরা সাংগঠনিক ভাবে প্রস্তুত আছি।
খোকসা থানার তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গাঁজা, গাঁজার গাছ, ফেনসিডিল ও ট্যাপেন্টা উদ্ধার করা হয়েছে। দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার ও একাধিক অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। দুটি ভিন্ন এলাকায় দুই খুনের ঘটনায় এজাহারভূক্ত দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। ৪ নিখোঁজ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানাভূক্ত ও নিয়মিত মিলে অর্ধশতাধিকের বেশি আসামি আদালতে তোলা হয়েছে। একটি ছিনতাইয়ের আসামিদের সনাক্ত করে একজনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।
What's Your Reaction?