খোকসার গ্রাম-গঞ্জে তালের পিঠা খাওয়ার ধুম
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে একেক ঋতুতে একেক রকম খাবারের ধুম পড়ে গ্রামগঞ্জের মানুষের। তা আবার প্রাচীনকাল থেকেই। এখন বাংলা বছরের ভাদ্র মাস, শরৎকাল চলছে। এসময় তালগাছ থেকে ধপধপ করে পাকা তাল পড়ছে। প্রাচীনকাল থেকে ভাদ্র মাসে পাকা তাল দিয়ে পিঠা, বড়া, পায়েসসহ নানা রকমের খাবার তৈরি করা করা হয়।
প্রাচীনকালের এই উৎসব এখনো ধরে রেখেছে গ্রামগঞ্জের নর-নারীরা। যাদের তালগাছ রয়েছে তারা ঘুম থেকে জেগে ভোরেই তালগাছ তলা থেকে তাল কুড়িয়ে নিয়ে আসে। আর যাদের তালগাছ নেই তারা হাট-বাজার থেকে তাল কিনে এনে সহজ প্রক্রিয়ায় তাল চিপে রস বের করে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে গুড়, চিনি, দুধ ও গরম মশলা দিয়ে পাতিলে তুলে জ্বাল করে নেয়। এরপর সুস্বাদু তাল পিঠা, বড়া ও পায়েসসহ নানা রকমের খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। তালের ২টি জাত রয়েছে। তা হচ্ছে মহিষা তাল ও দুধা তাল। মহিষা তাল দেখতে কালো আকারে বড় আর দুধা তাল দেখতে লালটে আকারে একটু ছোট।
বাজারে তাল বিক্রেতা আব্দুর রহমান জানান, আমি প্রতিদিন আমাদের তাল গাছ থেকে তাল কুড়ে এনে বাজারে বিক্রি করি। এতে কিছু টাকা আয় হয়। গাছপাকা ছোট তাল ৩০ টাকা, মাঝারি তাল ৪০ টাকা ও বড় তাল ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। আর হয়তো ১০/১২দিন বাজারে তাল বিক্রি করতে পারবো। এরপর তালের সিজন শেষ হয়ে যাবে।
উপজেলার কাঁচা তরকারির ব্যবসায়ী কার্তিক সাহা জানান, আমার এক আত্মীয় বাসায় কয়েকটি তাল দিয়ে গিয়েছিলো। সেইসব তালের রস দিয়ে পিঠা ও বড়া তৈরি করে খেয়েছি।
উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের রেশমা আক্তার জানান, প্রতিবছর আমি তাল দিয়ে পিঠা ও বড়া তৈরি করে খাই। গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে তাল খুব প্রিয় খাবার। তাই এখন গ্রামগঞ্জে তাল পিঠা, বড়া ও নানা রকম খাবার তৈরি করে খাওয়ার ধুম পড়েছে।
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার আরিফুল ইসলাম তাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানান, তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। এন্টি অক্সিডেন্ট গুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় তাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায় ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও তাল বেশ উপকারী। তালে আছে ভিটামিন-বি, তাই ভিটামিন-বি এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে।
What's Your Reaction?