চিৎমরমে মারমাদের ‘জলকেলি’ উৎসবে হাজার মানুষের ঢল

পুরোনো বছরের গ্লানি আর ক্লেশ ধুয়ে মুছে ফেলার প্রতীকী উৎসব হিসেবে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে উদ্যাপিত হলো মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই, যা জলকেলি উৎসব নামেও পরিচিত।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠ প্রাঙ্গণে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের মূল আয়োজক ছিল সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক উথোয়াইমং মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন, জেলা পরিষদ সদস্য ক্যওসিংমং মারমা, কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি লোকমান আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি জাফর আহমেদ স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মামুন।
প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধান অতিথি ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন উৎসবের মূল আকর্ষণ ‘জলকেলি’ পর্বের। পানির খেলায় অংশ নেয় মূলত অবিবাহিত তরুণ-তরুণীরা। একে অপরকে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁরা পুরোনো বছরের পাপ ও দুঃখ ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নেন—এমনটাই তাঁদের বিশ্বাস।
উৎসবে তরুণ-তরুণীরা মুখোমুখি হয়ে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় রাখা পানি একে অপরের দিকে ছুড়ে দেন। বাঁশির তালে তালে চলে দলীয় পর্যায়ে পানি ছিটানো। এই খেলায় যেমন আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে সবাই, তেমনি তরুণ-তরুণীদের কাছে এটি হয়ে ওঠে একে অপরের প্রতি অনুভূতি প্রকাশের এক বিরল সুযোগ।
সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে উৎসবস্থলে জমে ওঠে নানা বয়সী মানুষের মিলনমেলা। পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সবাই এতে অংশগ্রহণ করে। ফলে এটি শুধু মারমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে পরিণত হয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য এলাকার এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎসবে।
এভাবেই পাহাড়ের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে ঘিরে চিৎমরমে হয়ে উঠেছিল উৎসবের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে পাহাড় আর সমতলের মানুষের আনন্দ এক বিন্দুতে মিলেছে জলকেলির ধারায়।
What's Your Reaction?






