থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সঃ চিকিৎসকহীন ১০ দিন

থানচি(বান্দরবান)প্রতিনিধি
Nov 11, 2024 - 18:39
 0  13
থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সঃ চিকিৎসকহীন ১০ দিন

বান্দরবানের থানচি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স'র চিকিৎসকহীন ১০ দিন কেটেছিল। এর মধ্যে ১৫/১৬ জন সাধারণ চিকিৎসাযোগ্য রোগীকে বান্দরবান সদর হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে বিপাকে পড়েছে উপজেলাবাসী ও ৫০ শয্যা হাসপাতালটি।

আসন্ন শীতকালীণ সময়ের এলাকার বেড়েছে নিউমোনিয়া, ভাইরাস জ্বর,পেট ব্যাথাসহ নানা রোগে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সের লোকজন হাসপাতালের বর্হী বিভাগ ও অন্ত বিভাগের ভর্তি সংখ্য বাড়ছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স'র সূত্রে জানা গেছে,গত ৩১ অক্টোবর আবাসিক চিকিৎসক ২ জনের মধ্যে ডা: মেহেনাজ ফাতেমা তুলি ঢাকায় ট্রেনিং এর ছুটিতে, অপরজন ডা: আবদুল্লাহ আল নোমান হঠাৎ ব্লাড কেন্সার আক্রান্ত হয়ে ১ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে চলে যায়। ফলে ১ নভেম্বর হতে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে চিকিৎসকহীণ ছিলেন উপজেলার ৫০ শয্যা হাসপাতালের। ঔ সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স'র প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডা: ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ শিশু বিশেষজ্ঞ  ১জনের পক্ষে বর্হি ও অন্তর বিভাগ দুইটিতে  রোগীদের  চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেচ্ছে,গত বুধবার সরোওয়াদি হাসপাতাল থেকে আরএমও ডা: ধীমান কুমার রায়কে থানচিতে বদলী করা হলে ও এখন ও তিনি যোগদান করেন নি।

থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স 'র কর্মরত আবাসিক চিকিৎসক ডা: ফারজানা শামীম,ডা: সৈকত আলী সূজন ২ জনকে  ২০২২ সালের বান্দরবানে প্রেষনে নিয়ে রেখেছেন বলে নিশ্চিৎ করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তৃপক্ষ।

১৯৯৭ সালে স্থাপিত হওয়ার পর ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা উন্নীত হয় ২০১৮ সালে। উপজেলা ৩৫ হাজারে ও বেশী জনসংখ্যা এক মাত্র ভরশাস্থল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স'র টিতে এসিজি,নেবোলাইজার ও ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। বায়োকেমিস্ট্রি এনালাইজার, ওটি ও প্যাথলজি, এক্সরে মেশিন ও আলট্রাসনো মেশিনের মত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি না থাকার ব্যাহত হচ্ছে জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে জেলা সদরের বাধ্যতামূলক  স্থানান্ত করতে হয়েছে।

রোববার মোটরসাইকেলের সড়ক দুর্ঘটনা পায়ের সামান্য আঘাত প্রাপ্ত হয়ে  য়ংরাও ম্রো (৩৩) বলেন, আমি মোটর সাইকেল এক্সিডেন্ট করে পায়ে আঘাত পেয়েছি। থানচি হাসপাতালে এক্সরে মেশিন না থাকার আমাকে বান্দরবানে স্থানান্তর করা হয়েছে।

সোমবার সকালের পেট ব্যাথা হয়ে উম্যাসাই মারমা (১৬) বলেন, আমি সকালে পেট ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হয়েছি কিন্তু কোন পরীক্ষা করার বা জটিল রোগের চিৎকিসক না থাকায় আমাকে জেলা সদরে স্থানান্তর  করা হয়েছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র নার্স লালসাংপার বম  বলেন, গত ১০ দিন খুবই কস্ট পেয়েছি, ১৫/১৬ জন রোগীকে স্থানান্তর করতে হয়েছে। আসন্ন শীত আগমনে এখন সবাই বিভিন্ন রোগে ভূগছে। বিশেষ করে জ্বর,পেট ব্যাথা, ভাইরাস ও শিশুদের নিউমোনিয়া রোগ সহ অসংখ্য রোগী অন্ত বিভাগের ভর্তি হচ্ছে প্রতিদিন।

রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। জটিল কিছু রোগ হলে বান্দরবান সদরে স্থানান্তর করা হয়। এত বড় ভবন আর হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসক সংকট। চিকিৎসক বেশি থাকলে আমাদের সুবিধা হতো। এ ছাড়া এই হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। বর্তমানে শিশুরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই বান্দরবান সদরে প্রাইভেটে হাসপাতালে দেখাতে হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো.ওয়াহিদ্দু জামান মুরাদ বলেন, এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাছে চিঠিও দিয়েছি,কিন্তু এখনও কোন সুরহা পায়নি। গত বৃহস্পতিবার একজন ডাক্তার যোগদান করা কথা ছিলো কিন্তু এখনও আসেনি। আসন্ন শীতের সময় আমাদের সজাগ থাকতে হয়। এর কারণ শিশু আর বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। 

বায়োকেমিস্ট্রি এনালাইজার, ওটি ও প্যাথলজি, এক্সরে মেশিন ও আলট্রাসনো মেশিন আছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আজকের সকালে ও একজন রোগী আসছিলো পায়ের ব্যাথার রোগী কিন্তু আমাদের আলট্রাসনো মেশিন না থাকার বান্দরবান সদরে পাঠানো হয়েছে। গুরুপূর্ণ যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে একটি বরাদ্দ দেয়া কথা ছিলো যা এখনচপর্যন্ত কোন খবর নেই।

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুব  রহমান বলেন,থানচি থেকে দুইজন চিকিৎসক জেলা সদরে প্রেষনে রাখছি। তাদেরকে ফেরত পাঠানো সম্ভব না, পাঠানো হলে বান্দরবান হাসপাতার অচল হবে। আপাতত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে ঢাকা থেকে একজন চিকিৎসককে বদলী করা হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে যোগদান করবে। 

 চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের উপ পরিচালক ডা: অংশৈপ্রু মারমা বলেন, আমি মেটিংগে আছি পরে কথা বলবো।



What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow