দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত
আলমগীর হোসেন শুভ, বরগুনা প্রতিনিধি:
কারনে অকারণে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অন্যকে হয়রানি করাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে বরগুনার এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সরকারি অধ্যাদেশ না মেনে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ইউসুফ আলী নামের ওই প্রধান শিক্ষক।
বরগুনা সদর উপজেলার ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়নের লেমুয়া খাজুরা পার্বতী কলাতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী বিদ্যালয়টিতে যোগদানের পর থেকেই ম্যানেজিং কমিটি থেকে শুরু করে দপ্তরী পর্যন্ত এমন কেউ নেই যে তার হয়রানির শিকার হয়নি, এমনটিই জানিয়েছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী।
শনিবার (২৭ জানুয়ারী) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী ২০১৪ সালের ১লা জুন যোগদানের পরে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪বছর এডহক কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হওয়ার পরে ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়। এই ৪বছর শিক্ষামন্ত্রনালয়ের অধ্যাদেশ না মেনে এডহক কমিটির মাধ্যমে প্রায় আট লক্ষ একুশ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও হিসাবে গড়মিলের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলীকে আসামী করে বরগুনা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন সোহেল। মামলাটি বর্তমানে তদান্তাধীন রয়েছে। কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না মর্মে সাত দিনের মধ্যে জবাব চেয়ে অভিযুক্ত ইউসুফ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে ম্যানেজিং কমিটি।আর সেখান থেকেই ইউসুফ আলীর মারধরের নাটক ও তার পিছনের ইতিহাস উঠে আসে।
২০১৬ সালের ইসমাইল হোসেন নামের এক শিক্ষককে এনটিআরসি কর্তৃক বিদ্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেওয়ার পরেও ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে দেয়নি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে, তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুরুজ্জামান ওই শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে তার অফিসকে জানাতে বলার নির্দেশ প্রদান করে।
এছাড়াও ২০১৫ সালে রেজুলেশনে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং অফিসার বিভাষ কুমার দাসসহ ০৫ জন সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইব্রাহীম প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক নিকট প্রতিবেদন দাখিল করে ইউসুফ আলীর জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
সর্বশেষ, গত ২১ জানুয়ারী প্রধান শিক্ষকের এ্যাসেম্বেলিতে অংশ গ্রহন না করার বিষয়টি জানতে চাওয়া মৌখিক বাকবিতান্ডাকে নাটকে পরিণত করে মারধর ও ভাঙচুরের নাটক সাজিয়ে ঢালাওভাবে সেটিকে প্রচার চালিয়ে নিজের অর্থ আত্মসাৎতের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী এমনটাই বলেছেন স্থানীয় মানুষ, অবিভাবক ও ছাত্র ছাত্রীরা। তারা জানান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন সোহেল বিদ্যালয় থেকে যাওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে চেয়ার ভাঙচুরের শব্দ শুনতে পান তারা এমনকি প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী ও অপর আরেক শিক্ষক জুয়েলকে নিয়ে চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা দেখতে পায় অনেক ছাত্র ছাত্রীরা। এই ভাঙচুর ও মারধর করে এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার টাকা ইউসুফ আলীর টেবিল ভেঙে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগতুলে বরগুনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন ইউসুফ আলী।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন সোহেল জানান, হিসেবে ঘরমিল ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করলে প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী নিজের দোষ আড়াল করতে ও আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে মারধরের নাটক সাজিয়েছে ইউসুফ আলী। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছি, আদালতের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে আমি ন্যায় বিচার পাবো বলে আশা করছি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলীর মোবাইল ফোনে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরেই পরে কথা বলবেন বলে ফোনটি কেটে দেন।
বরগুনা থানার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দরখাস্তকারীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিলো বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা হবে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী।
What's Your Reaction?