নগরকান্দায় শতবর্ষী এমএন একাডেমী যেন প্রাণ ফিরে পায় ঈদ পুনর্মিলনীতে
ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সরকারি মহেন্দ্র নারায়ন একাডেমী। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হয়। জাতীয়করণের আগে এর নাম ছিলো এম এন একাডেমী। কুমার নদের পাড় ঘেষে এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি দাঁড়িয়ে আছে এক বটবৃক্ষের মত। এর সাথে জড়িয়ে নগরকান্দা-সালথার হাজারোও মানুষের আবেগ, ভালোবাসা ও স্মৃতি। ১৯১৬ সালে বাবু মহেন্দ্র নারায়নসহ অন্যান্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয় মহেন্দ্র নারায়ন একাডেমী।
প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে নিজ এলাকায় ফিরেই সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ছুটে আসে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।এখানে ব্যাচ ভিত্তিক একত্রিত হয়ে সকলে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। আবার কেউ কেউ প্রোগ্রাম দেয় ঈদের পরে। সব মিলিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এই শতবর্ষী স্কুলটি যেন প্রাণ ফিরে পায়। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ কর্ম ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এই প্রতিষ্ঠানে এসে।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ২৯ তম রোজায় এবং বুধবার (১০ এপ্রিল) ৩০ তম রোজায় দেখা যায় স্কুলের ভিতরে, স্কুলের মাঠে, উপজেলা চত্বরে, হেলিপ্যাড মাঠে ও শহীদ আক্রামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে ব্যাচ ভিত্তিক ইফতার পার্টিতে অংশ নেয় এমএন একাডেমীর শত শত প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
এসএসসি ২০০৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী যোবায়ের আহমেদ খান ঢাকা উত্তরা টেকলঞ্চ ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বলেন,
২০০৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে নগরকান্দা ছাড়ার পর সকল বন্ধুদের সাথে একত্রিত হওয়ার সুযোগ শুধুমাত্র ঈদের সময়ই আসে। আর আমরা ২০০৮ ব্যাচ নগরকান্দায় ২০১২ সাল থেকে ২৯ তম রোজায় নিয়মিত ইফতার আয়োজন করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য ব্যাচগুলিও এখন নিয়মিত ইফতার আয়োজন করে যা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করলেই মনে পরে, একসাথে স্কুলে যাওয়া, সকালবেলা ঘুমঘুম চোখে পিটি করা আর আকাশ কাঁপিয়ে সমস্বরে বলে ওঠা "আমি শপথ করিতেছি যে..."
মাঝেমাঝে স্কুল পালানো আর প্রতিদিন স্কুল শেষে বন্ধুর বিশ্বস্ত কাঁধে হাত রেখে বাড়ি যাওয়া? প্রার্থনা করি এমন আয়োজন হোক প্রতিবছর, আর খুঁজে পাই সেই হারানো শৈশব কে।
একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. তামজিদ আহমেদ সিদ্দিকি বলেন, আমি বর্তমানে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত রয়েছি। ঈদ পুনর্মিলীতে এখানে এসে অনেক ভালো লেগেছে। অনেক স্মৃতি বিজড়িত এই প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় আসলে আত্মিক শান্তি উপলব্ধি করি।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, জাতীয়করণের পরে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বর্তমানে ১ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী, ২২ জন শিক্ষক ও ৭ জন কর্মচারী রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মানোন্নয়নে স্কুলটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকগণ নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির এসএসসি ১৯৮২ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. বেলায়েত হোসেন মিয়া বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পরে আমি রাজনৈতিক সহযোগিতাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি, যা প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। স্কুলটির শিক্ষার মানোন্নয়নে আমার আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের শত শত প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেশের অনেক বড় বড় পদে দায়িত্ব পালন করে দেশের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। ঈদের ছুটিতে নিজ এলাকায় এসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীগণ প্রতি বছরই ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে থাকে যা আমাদের জন্য গৌরবের।
What's Your Reaction?