পরীক্ষায় ফেল করায় শিক্ষকদের হুমকি, পাস করাতে রাজনৈতিক চাপ

মো: নাজমুল হোসেন, পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
Mar 18, 2025 - 21:02
 0  12
পরীক্ষায় ফেল করায় শিক্ষকদের হুমকি, পাস করাতে রাজনৈতিক চাপ

পিরোজপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ থেকে সমন্বয়ক হওয়া মিজান নামে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মিজান সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলার আবু তালেবের ছেলে এবং পিরোজপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে, এক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার পর থেকে ইনচার্জসহ একাধিক ইনস্ট্রাক্টরকে হয়রানির অভিযোগ ওঠে মিজানের বিরুদ্ধে।

নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ বেবী রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "মিজান পরীক্ষায় ফেল করার পর থেকে বিভিন্ন প্রভাবশালী নার্স নেতা, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে আমাদের ওপর পাশ করানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। যখন এতে কাজ হয়নি, তখন সে আমাকে মামলা করার হুমকি দেয়।"

নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর প্রভা রানী বড়াল বলেন, "মিজানুর রহমান আমাদের ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থী। ফলাফল প্রকাশের পর থেকে সে বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক নেতা ও সমন্বয়কারীদের দিয়ে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। তবে সে যে বিষয়ে ফেল করেছে, সেই বিষয়ে আমাদের কোনো শিক্ষক পরীক্ষক ছিলেন না। ওই বিষয়ের পরীক্ষা বাইরের শিক্ষকরা নিয়েছেন। আমরা কখনো চাই না কোনো শিক্ষার্থী ফেল করুক।"

আরেক ইনস্ট্রাক্টর সাজেদা খানম বলেন, "মিজান ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ক্লাসে অমনোযোগী ছিল। প্রথম বর্ষে সে এক বিষয়ে ফেল করেছিল, কিন্তু তখন কোনো সমস্যা হয়নি। এবার ফেল করার পর সে আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। আমরা সবাই এ ঘটনায় বিব্রত। পরীক্ষায় ফেল করলে আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকে, কিন্তু তার এমন আচরণ দুঃখজনক।"

ইনস্ট্রাক্টর নিপা মণ্ডল জানান, "মিজান প্রথম বর্ষ থেকেই অনিয়মিত ছিল এবং নানা অজুহাত দেখাত। আমরা তার আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে কিছু বলিনি। এবার সে ফেল করার পর আমাদের হয়রানি করছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।"

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, "মিজান ভাই পরীক্ষা দেওয়ার পর নিজেই বলেছিলেন, তার খারাপ হয়েছে। এরপর তিনি কেন এমন আচরণ করছেন, বুঝতে পারছি না। আমাদের ইনস্ট্রাক্টররা সবসময় আমাদের সন্তানের মতো দেখেন, তারা কখনোই চান না কেউ ফেল করুক।"

একজন শিক্ষার্থী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, "মিজান সবসময় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের প্রভাব দেখাতেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে চলতেন। গত ৫ আগস্টের পর হঠাৎ করে তিনি সমন্বয়ক হয়ে যান। এবার পরীক্ষায় ফেল করার পর ইনস্ট্রাক্টরদের হয়রানি শুরু করেছেন। তাকে অবিলম্বে বহিষ্কার করা উচিত।"

নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ বেবী রায় বলেন, "মিজান ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে চলত, এখনো তা-ই করছে। পরীক্ষার আগে দলবল নিয়ে এসে পরীক্ষার হল ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিল। এখন ফেল করার পর মিথ্যাচার করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই।"

অভিযোগ অস্বীকার করে মিজান বলেন, "তারা আমার শিক্ষক, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা তো দূরের কথা, কোনো খারাপ কথাও বলিনি।" এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow