ফরিদপুরে বিকাশ-প্রথম আলো ট্রস্টের উদ্যোগে ১৮টি প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ
দেশ ও বিদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টি জানতে বই পাঠের কোন বিকল্প নেই। একটি বই চলমান লাইব্রেরির মত। বই বিমুখতা আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে। তাই বইএর কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে।’
‘আপনার অনুদানে মেধার বিকাশ’-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ফরিদপুরে বিকাশ-প্রথম আলো ট্রস্টের উদ্যোগে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথাগুলি বলেন ফরিদপুরের প্রবীর শিক্ষাবিদ, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি আলতাফ হোসেন।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে ওই প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিনিধিদের হাতে পাঁচ হাজার ৬০টি বই তুলে দেওয়া হয়।
আলতাফ হোসেন আরও বলেন, নিজের মানস গঠন ও বিকাশে বই একটি অনিবার্য উপাদান। প্রয়োজনে নিজেকে বইএর ফেরিওয়াল হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে বই পৌঁছে দিতে হবে। পলান সরকার যে কাজ করে গেছেন আমাদের সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিকাশের জেনারেল ম্যানেজার রুখসানা মিলি বলেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ বই মেরায় ঢাকার অধিবাসীরা অংশ নিয়ে বই কেনা ও পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু সারা দেশের মানুষ এ সুযোগ তেকে বঞ্চিত হয়। এই বঞ্চনার অবসানে বই সংগ্রহ করে বিকাশ সারাদেশে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঠাগার ও বৃদ্ধাশ্রমে বই বিতরণের এক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গতবছর বিকাশ এক লাখ ৮৭ হাজার বই বিতরণ করেছে। চলতি বছর প্রথম আলো ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় সারা দেশে মোট ১ লাখ ২০ হাজার বই বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে বিকাশ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল) এর অনুপ্রেরণায় গঠিত ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শিপ্রা রায়।
অধ্যাপক শিপ্রা রায় বলেন, ইন্টারন্টে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কারনে আমাদের বই পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে। এ বই পড়ার অভ্যাস পুণরায় গড়ে তুলতে দেশের লাইব্রেরিগুলিকে সচল করার পাশাপাশি পাঠককে বই মনস্ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এরজন্য আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, যে বই পড়ে না তার দৃষ্টি শক্তি খোলে না। তাদের অবস্থা অনেকটা অন্ধের মত। এর আগে আমরা ফরিদপুরে পলান সরকারকে এনে সংবর্ধনা দিয়েছি। তিনি যে ভাবে পাঠকদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবীর কান্তি বালা। অনুষ্ঠানে অন্যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিকাশের জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল।
বই বিতরণ অনুষ্ঠানে ফরিদপুর জেলার ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় তিনশটি করে বই প্রদান তুলে দেওয়া হয়।
এ ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলফাডাঙ্গা উপজেলার অধরা পাঠাগারের পক্ষে শুভঙ্কর পাল, নগরকান্দার পুরপাড়াঅনার্স ক্লাব গ্রন্থাগারের পক্ষে ওসমান মোল্লা, মধুখালীর চেতনা পাঠাগারের পক্ষে মঈন আহমেদ, বোয়ালমারীর রাবেয়া আফছার স্মৃতি পাঠাগারের পক্ষে রায়হানুল ইসলাম, ফরিদপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষে সহকারি এমদাদ মিয়া, পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজের পক্ষে মো. আনিসুর রহমান রহমান, ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. ইমরান হোসেন, আনছার উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ডালিয়া আলী, নূরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষে আলতাফ হোসেন, বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির সহকারি শিক্ষক শাম্মী আক্তার, আয়শা খানম স্মৃতি পাঠাগারের পক্ষে ডিউভি সিকদার, সূফি মোতাহার হোসেন পাঠাগারের পক্ষে মো. মোজাফফর হোসেন, সরকারি মহেন্দ্র নারায়ন নএকাডেমির পক্ষে সহকারি শিক্ষক ইউনুস খান, ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষে সহকারি শিক্ষক তরিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষে সহকারি শিক্ষক শেখ নূরুল, সালথা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যারয়ের পক্ষে সহকারি শিক্ষক মো. রেজাউল করিম, সদরপুর বাইশরশি শিব সুন্দর একাডেমির সহকারি শিক্ষক মো. জলিল মিয়া ও চরভদ্রাসন রোকনউদ্দিন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মেহেদী হাসান।
বই হাতে পেয়ে আব্দুল্লাহবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শেখ নূরুল বলেন, চারিদিকে যতাশা নিরাশা এর মধ্যে প্রথম আরো-বিকাশ আমাদের গ্রামের মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিয়েছে এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি মনে করি আমার শিক্ষার্থীরা এ বই পড়ে তাদের মেধা ও মনন শানিত করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিজুল হক বলে, আমি বই পড়ি। বই বিতরণ করা হবে শুনে এ অনুষ্ঠানে আইছি। আমার খুব ভালো লাগছে। আমি বই কিনি, নিজে টাকা জমিয়ে। বই মেলা হলে আমি বই দেখতে ও কিনতে যাই।
What's Your Reaction?