বরেন্দ্র অঞ্চলে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে মানুষ

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে ছাগল পালন এখন শুধু চিরচেনা পেশা নয়, অনেকের জন্য তা হয়ে উঠেছে আত্মনির্ভরতার পথ। গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত শক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে এই খাত, বিশেষত প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর জন্য।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলায় ছাগল মোটাতাজাকরণ খামারের সংখ্যা ইতোমধ্যে ১০০ ছাড়িয়েছে। চলতি বছর ছাগলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ লাখ ২৬ হাজারে, যা গত বছরের তুলনায় এক লাখ বেশি।
গ্রামের মানুষ ব্ল্যাক বেঙ্গলসহ নানা জাতের ছাগল পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। শুধু নিজেরাই স্বনির্ভর হচ্ছেন না, প্রোটিনের ঘাটতি পূরণেও দিচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুচিকিৎসা ও প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল সরদার বলেন, “ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতটি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাংস উৎপাদনকারী জাত। এর প্রজনন হার বেশি, মাংস সুস্বাদু ও চামড়া আন্তর্জাতিক মানের।” তিনি আরও বলেন, “দারিদ্র্য দূরীকরণে এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়।”
বর্তমানে খড়, গুড়, ছোলা, তেলের খোসা, সবুজ ঘাস ও গমের ভুসির মতো প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহার করেই ছাগল মোটাতাজা করা হচ্ছে। এখন আর ক্ষতিকর স্টেরয়েড ও ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় না বলে জানান স্থানীয় খামারিরা।
অধ্যাপক জালাল সম্ভাবনাময় এই খাতকে সম্প্রসারণে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, উন্নত প্রজনন পদ্ধতি ও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রয়োজন দক্ষ জনবল ও প্রদর্শনী খামার।
উল্লেখযোগ্য উদাহরণ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের সোহেল রানা ও রিমা খাতুন দম্পতি। সরকারি চাকরি না পেয়ে তারা প্রায় সাত বছর আগে বাড়িতেই ছাগল পালন শুরু করেন। এখন তাদের নিজস্ব একটি খামার রয়েছে।
সোহেল বলেন, “এই বছর আমরা ২ লাখ টাকায় ৪০টি ছাগল কিনেছি। এরমধ্যে আটটি ছাগল ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আশা করছি বাকি ছাগল থেকে আরও প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে।”
এভাবেই বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক মানুষ ছাগল পালন করে বদলে ফেলছেন নিজেদের ভাগ্য।
What's Your Reaction?






