বহুজাতিক কোম্পানির নির্লিপ্ততায় হতাশ তামাকচাষিরা

মোঃ কামরুজ্জামান, লামা প্রতিনিধ, বান্দরবানঃ
Apr 15, 2025 - 22:42
 0  1
বহুজাতিক কোম্পানির নির্লিপ্ততায় হতাশ তামাকচাষিরা

বান্দরবানের লামায় উচ্চ ফলনশীল তামাক চাষ করে এবার বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। মৌসুমের শুরুতে অনুকূল আবহাওয়া ও উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনায় আশাবাদী হলেও এখন বাজারে তামাক বিক্রিতে ভাটা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সরবরাহকৃত উন্নত জাতের ‘বেরাইটি’ বীজ ব্যবহারে আশাতীত পরিমাণ তামাকপাতা উৎপাদন হয়েছে। লক্ষ্য ছাড়িয়ে যাওয়ার এই উৎপাদনে কৃষকের মুখে হাসি নয়, বরং উদ্বেগের ছাপ।

নিবন্ধিত কৃষকদের অভিযোগ, উৎপাদনের হার বাড়লেও তামাক পাতার গুণগত মান কমে গেছে। বিশেষ করে চুল্লিতে কিউরিং করার পর ‘বেরাইটি’ জাতের তামাক পাতার রঙ কালচে হয়ে যাচ্ছে। এই পাতাগুলো কোম্পানির ক্রয়ের তালিকায় ‘নিম্ন গ্রেডে’ পড়ে, ফলে দামও কম। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কালো পাতা কোম্পানি কিনতেও আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

একজন নিবন্ধিত চাষি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “খেতে যখন পাতার বাম্পার ফলন হলো, তখন মনে হয়েছিল ভালোই লাভ হবে। কিন্তু কিউরিং করার পর পাতা কালো হয়ে যাচ্ছে। এখন কোম্পানি বলছে এই পাতাগুলো হয়তো নেবে না। আমাদের তো এখন নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার জোগাড়।”

স্থানীয়রা জানান, ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ’ প্রথমবারের মতো মাতামহুরি নদীর পাড়ে তামাক চাষ শুরু করে। এরপর থেকে পার্বত্য অঞ্চলের উর্বর জমিতে বিস্তার ঘটতে থাকে এই চাষের। বর্তমানেও কোম্পানিটি চাষিদের আগাম ঋণ, সার-বীজ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে চাষে উৎসাহিত করে যাচ্ছে।

তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, তামাকের কিউরিং প্রক্রিয়ায় প্রচুর গাছপালা পোড়ানো হয়, যা এলাকার বন ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি। উপরন্তু, বসতবাড়ি, পানির উৎস কিংবা পাহাড় ছাড়া প্রায় সর্বত্রই তামাক চাষ হওয়ায় জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বাস্তবায়নে তেমন তৎপরতা নেই বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। বরং, বহুজাতিক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় কিছু লোকদেখানো উদ্যোগ — যেমন স্যানিটেশন, বনায়ন ও কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম — কৃষকদেরকে তামাক চাষে আরো বেশি উৎসাহিত করে তুলছে।

প্রতিবছরই তামাক চাষ কমানোর সরকারি ঘোষণার বিপরীতে বাস্তবে তা আরও বাড়ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় সরকারি তদারকি, বিকল্প ফসলের প্রণোদনা ও বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow