বেইলি রোডের আগুনে বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুলিশ কর্মকর্তা বাবা
অসুস্থতাজনিত কারণে ৬ বছর আগে মারা যান স্ত্রী। দুই কন্যা সন্তানের কথা চিন্তা করে পুলিশ কর্মকর্তা আর বিয়ে করেননি। বাংলাদেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অধ্যায়নরত বড় কন্যা রাজধানীর বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে আগুনে পুড়ে মারা যওয়ায় শোকে স্তব্ধ পুলিশ কর্মকর্তা বাবা।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা। ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলী মহল্লার একতলা বাড়ি স্বর্ণলতার সামনে ফ্রিজিং ভ্যানে রাখা একটি লাশ। বাড়ি ভর্তি স্বজন এবং এলাকাবাসীর ভিড়। স্বজনদের কান্নার আহাজারিতে শোকে মুহ্যমান সবাই। চেয়ারে বসে আছেন কন্যা হারানোর শোকে নির্বাক বাবা পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নাসিরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে যে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন, তাঁদের একজন নাসিরুল ইসলামের বড় মেয়ে লামিসা ইসলাম (২৩)। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন লামিসা।
স্বজনদের থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে নাসিরুল ইসলামের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দুই কন্যা লামিসা এবং রাইসা ইসলামের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। সন্তানদের নিয়ে থাকতেন রমনার পুলিশ কমপ্লেক্সে। কন্যাদের মানুষের মতো মানুষ করতে মায়ের ভূমিকাও পালন করতেন বাবা। স্বপ্ন ছিল কন্যাদ্বয় বাবাকে ছাড়িয়ে যাবেন পৌঁছাবে অনন্য উচ্চতায়। বড় মেয়ে সেই পথেই হাঁটছিলেন।
নিহত লামিসা রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বুয়েটে যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান।
কিন্তু সর্বনাশা আগুন মুহূর্তেই কেড়ে নিলো লামিসার প্রাণ।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যান লামিসার মরদেহ নিয়ে ফরিদপুর শহরে তাঁদের বাড়িতে আসে। সেখানে আগে থেকেই পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও স্বজনেরা ছিলেন।
ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলী মহল্লায় বাড়ির সামনের রাস্তায় স্বজন ও সহকর্মীদের নিয়ে চুপচাপ বসেছিলেন লামিসার বাবা নাসিরুল ইসলাম। কন্যা হারানোর শোকে তিনি এতটাই নিশ্চুপ হয়ে গেছেন, যে কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন না। কাঁদছিলেনও না। বাদ জুম'আ ফরিদপুর চকবাজার জামে মসজিদে জানাজা শেষে আলিপুর কবরস্থানে লামিসা ইসলামকে দাফন করা হয়।
What's Your Reaction?