বেরোবিতে আবাসিক সুবিধায় অনিয়ম, বছরে কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ

মাসফিকুল হাসান বেরোবি (রংপুর)প্রতিনিধি:
Feb 1, 2025 - 18:58
 0  4
বেরোবিতে আবাসিক সুবিধায় অনিয়ম, বছরে কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত দল।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের প্রশাসনের সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে কম খরচে আবাসন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকারের বাসা ভাড়া নীতিমালা অনুযায়ী পূর্ণ ভাড়া কর্তন করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি।

২০১৯, ২০২১ এবং ২০২৩ সালের বাজেট পরীক্ষায় ইউজিসির পর্যবেক্ষক দল আবাসন ব্যবস্থার এই অনিয়ম চিহ্নিত করে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৯টি অনিয়মের মধ্যে প্রথমেই বাড়ি ভাড়ার অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়।

২০২১-২২ অর্থবছরে ১৭টি অনিয়মের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে একই অনিয়মের কথা বলা হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫টি অনিয়ম পাওয়া গেলে প্রথমেই এই বাড়ি ভাড়ার অনিয়মের কথা বলা হয়।
জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী, সরকারি বাসায় বসবাসকারী কর্মকর্তাদের বাড়ি ভাড়া পাওয়ার কথা নয়। অথচ বেরোবির শিক্ষক-কর্মকর্তারা ৭৫০-৮০০ স্কয়ার ফুটের বাসার জন্য মাত্র ২,০০০ থেকে ২,২০০ টাকা ভাড়া দিচ্ছেন, যেখানে মূল বেতনের ৪০-৫৫% পর্যন্ত কাটা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাসা ভাড়া কর্তন করা হয়। ক্যাম্পাসে আবাসন সংকট থাকায় সাময়িকভাবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাদের। তবে ইউজিসি এই দাবির সঙ্গে একমত নয় এবং নীতিমালা অনুযায়ী বাসা বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শওকাত আলী বলেন, "ইউজিসির টিমের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ জন্য নীতিমালা কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী অধ্যাপক লেভেলের শিক্ষকরা এখানে থাকতে পারবেন না, শুধু জুনিয়র শিক্ষকরা থাকতে পারবেন। এটি আগামী সিন্ডিকেট মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের হলে উচ্চমূল্যে ভাড়া নেওয়া হলেও শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য নিয়ম বহির্ভূত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম আশিকুর রহমান বলেন, "২০২৪-এর বিপ্লবের পরও যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম দূর করতে না পারি, সেটাই হবে বড় ব্যর্থতা। শিক্ষার্থীদের হল ভাড়া ২৫০ টাকা, যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি, অথচ শিক্ষক-কর্মকর্তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে কম ভাড়া দিচ্ছেন।"
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দ্রুত এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow