লামা থানায় মামলা নিতে ওসির গড়িমসি, আইন শৃঙ্খলা সভায় ক্ষোভ
বান্দরবানের লামাশ আইন শৃঙ্খলার অবনতিতে উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় সাংবাদিক ও বিএনপি নেতার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
৫ আগস্টের পর কিছুদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার পর সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নিতে ওসির গড়ি মসি।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) লামা উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তারা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সভায় বিএনপি নেতা আমির হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশ নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন। ওই সময় উপজেলা বিএনপির উদ্যােগে মানুষের জানমাল ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩২ জন করে নেতাকর্মীদের দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়েছিলো। এর পর পুলিশ ক্রমেই স্বাভাবিক হয়।' তিঁনি বলেন, 'এখন ওসি সাহেব চোরদের বিরুদ্ধেও মামলা নিচ্ছেন না।' প্রসঙ্গক্রমে বলেন, 'সরই ফেয়ারি এগ্রো'র খামারে ৫ আগস্ট গরু লুটের সাথে তাদের কর্মচারীরা জড়িত ছিলো। বর্তমানে বাগান লুটতরাজে আওয়ামীলীগ নেতা এক মেম্বার জড়িত থাকার তথ্য আছে। ফেয়ারি এগ্রো'র বাগানের গাছ বিক্রির টাকা পুলিশ ফাঁড়ির আইসির সামনে বসে ভাগ বন্টন হয়।' ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে হয়রানির বিষয়ে তিঁনি বলেন, 'জনপ্রতিনিধিরা জনগনের কামড় সইতে পারেন কিন্তু সরকারি কর্মচারীরা সেটা পারেন না।
সাম্প্রতিককালে পরিবেশ রক্ষায় লাগাতার অভিযান পরিচালনার জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেটকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাংবাদিক কামালুদ্দিন বলেন, 'লামার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতাম। দু:খজনক হলেও সত্য যে, ৫ আগস্ট পরবর্তীতে কয়েকদিন ভালো ছিলো। পরের সময়গুলো এখন পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা ভালো নেই। মানুষ সাংবাদিকদের কাছে এসে যেসব অভিযোগের কথা জানান, তাতে হতাশাজনক চিত্র ফুটে উঠে। থানায় অভিযোগ দিয়েও সুফল পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি একজন আইনজীবী সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন। সরই ইউনিয়নে সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্ত্রীর বাগান থেকে ৫ কোটি টাকার বৃক্ষ লুট করে নিয়েছে আওয়ামী দোসর নাসির মেম্বারের নেতৃত্বে পাহাড়ি-বাঙালি যৌথ একটি সন্ত্রাসী চক্র। সেখানে লুট পাটের সাথে জড়িত বিএনপি সমর্থনকারী কিছু লোকের নাম শুনা যাচ্ছে। ফেয়ারি এগ্রোর পক্ষ থেকে থানায় এজাহার দায়ের করেন। ওসি সাহেব এজাহারটি মামলা আকারে গ্রহন করেন নাই। এর ফলে সঙ্ঘবদ্ধ চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপটি আরো বেপরোয়া হয়ে বাগানের গাছ কর্তন করে নিয়েছে। এখনো অব্যাহত আছে। থানার ওসি সাহেব এই দায়ভার এড়াবেন কিভাবে। বাগান সৃজনকারীরা (সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম) যদি আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী হয়, তার বিচারও হবে। কিন্তু লুটপাটের চর্চা এখন বন্ধ না করলে ভবিষ্যতে থামানো যাবেনা। থানার পুলিশ সক্রিয় হলে এই হরিলুট থামানো যেতো। মানুষের সম্পদ ৮০% রক্ষা পেতো। মিডিয়া আছে বলে এসব অনিয়ম লুন্ঠনের কথা বলা হচ্ছে'। বর্তমানে ফেয়ারি এগ্রো'র ওই বাগানের বাংলোসহ অবশিষ্ট ১০ কোটি টাকার সেগুন গাছসহ অন্যান্য সম্পদ লুট করার পায়তারা চলছে। কতিপয় অসাধু ব্যাক্তি সরই ইউনিয়ন পরিষদে চলমান ভোটার তালিকা নিয়ে বাণিজ্য করছেন। সাধারণ মানুষ কাগজপত্র নিতে গেলে একাধিক খাতে
টাকা দিতে হয়। ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, ফাইতংয়ে ইতোপূর্বে আপত্তিপড়া হাজারখানেক রোহিঙ্গা ভোটার এবার টাকা দিয়ে ভোটার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।' লামা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, এই ৫ আগস্টের আগে বদলি হয়ে আসা কর্মকর্তাদের বদলি না করলে সেবা নিশ্চিত হবেনা। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের
সংশ্লিষ্ট ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সাংবাদিক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইউএইচএফপি'র বিরুদ্ধে সেবা প্রার্থীরা নানান অভিযোগ দিচ্ছেন।
তিনি সাধারণ মানুষে সেবা দিতে বিলম্ব করছেন।
লামা উপজেলা জামায়াতে ইসলাম এর আমির কাজী ইব্রাহীম বলেন,স্বৈরাচার সরকারের নিপীড়নকারী মামলার প্রধান আসামীদের পালানোর সুযোগ করে দিয়ে নিচের লেভেলের আসামী ধরা হচ্ছে। জামায়াত নেতা বলেন, এলাকায় ইটভাটা বন্ধে প্রশাসন তৎপর। কিন্তু সরকারি ও ব্যাক্তিগত উন্নয়ন কাজে এক কোটি ইটের চাহিদা রয়েছে। ইটের বিশাল চাহিদা পূরণ করতে অন্য জেলা থেকে ইট কিনতে ৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে।
সভায়, গজালিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গজালিয়া ও লুলাইন পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজীতে মানুষ অতিষ্ঠ। তার ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের সন্তানরা ভোটার হচ্ছে।
রুপসিপাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, হালনাগাদ ভোটার তালিকা করণে অনলাইন কার্যক্রমে বিড়ম্বনা হচ্ছে। হালনাগাদ ভোটার সময় বৃদ্ধি করা দরকার বলে জানান।
ফাইতং চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ বলেন, আপাততঃ আইন শৃঙ্খলা মোটামুটি ভালো। ভোটার কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে। সেখানে পু্লিশ কার্যকর ভূমিকা পালন করছেন। লামা সদর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহীদুল বলেন, দুর্গমে বাঁশ ব্যবসায়ীদের থেকে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা প্রতিটি বাঁশ থেকে সরাসরি ও মোবাইলে ২ ও ৫ টাকা করে চাঁদা দাবি করায়, সেখানে বাঁশ ব্যবসা এখন বন্ধ। এর সাথে জড়িতরা কষ্টে আছে। সেখানে চাঁদাবাজদের যন্ত্রনায় মুরুং সম্প্রদায়ও অতিষ্ট। সেনাবাহিনীর টহল দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
আজিজনগর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সাত্তার মেচ ফেক্টরির লোকেরা স্থানীয়দের বাগান উজাড় করছে।
লামা অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহদাত হোসেন বলেন, পুলিশ কারো পক্ষপাতী নই, আইনের পথে চলে। সরই বাগান লুটতরাজের বিষয়ে আমরা যখনই তথ্য পাই, তখনই চেষ্টা করা হয়। সীমিত জনবল নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছি। এ মাসে ৪টি অস্ত্রসহ ডাকাতি মামলার আসামী গ্রেফতার করেছি। সভায় কমটির সভপতি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট রুপায়ন দেব বলেন, 'আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নে প্রশাসন সর্বদা সক্রিয় রয়েছে। জনগনের সেবায় আমরা নিয়োজিত। সকল কর্মচারী স্বস্ব অবস্থানে থেকে নিষ্ঠার থাথে দায়িত্ব পালন করবেন'। আইন শৃঙ্খলা সভা শেষে মাসিক সমন্বয় সভায় বিভাগীয় প্রধানগন স্বস্ব বিভাগের অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
What's Your Reaction?