লালমনিরহাটে শিশু রোমানের হত্যাকারী গ্রেফতার
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের খোলাহাটি গ্রামে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার ৬ বছরের শিশু রোমানের হত্যাকারী গ্রেফতার। এ বিষয় গত(২ই এপ্রিল) ২০২৪ইং মঙ্গলবার বিকালে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তি অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জেলা পুলিশ সুপার এসব তথ্য প্রদন করেন। মামলার বাদী মোঃ আমিনুর ইসলাম (৪৫), পিতা-মোঃ রফিকুল ইসলাম আদিতমারী থানাধীন ভাদাই খোলাহাটি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। বাদী ভাদাই ইউপির ত্রিমোহনী সেতু বাজারে কম্পিউটার দোকান করেন। ছেলে মোঃ রোমান হোসেন (৬)।
তিনি প্রতিদিনের ন্যায় গত ইং- ২৯/০৩/২০২৪ তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে ৯ টার সময় ত্রিমোহনী সেতু বাজারে তার ব্যবসায়ীক দোকানে যান। ওইদিন বিকাল আনুমানিক ৫ টার সময় বাদীর দুই ছেলে আসিফ মিয়া ও রোমান হোসেন বাদীর দোকানে বেড়াতে যান। বাদী তাহাদেরকে উক্ত দোকানের কম্পিউটারে কার্টুন ভিডিও দেখিতে দিয়া বাড়ীতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যান। ওইদিন বিকাল অনুমান সাড়ে ৫ টার সময় বাদী বাড়ী হইতে দোকানে আসিয়া দেখেন যে, তাহার ছোট ছেলে রোমান দোকান ঘরের মধ্যে নাই। পরবর্তীতে বাদী তাহার পাশের দোকানদার শ্রী ভগো চন্দ্র রায়কে ও বড় ছেলে আসিফ মিয়াকে ছোট ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করলে জানায় যে, একটু আগে কোথায় যেন গেল। পরবর্তীতে ইফতার শেষে বাদী তার দোকান ঘরে অবস্থান করাকালে বাদীর স্ত্রী তার দোকানে আসিয়া বলে যে, 'আমার ছোট ছেলে রোমান হোসেন কেন এখনো বাড়ীতে যায় নাই, সে কোথায়"?তখন বাদী সহ স্থানীয় লোকজন বাদীর ছোট ছেলেকে আশেপাশের দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি করেন। তাহাকে কোথাও না পেয়ে একপর্যায়ে বাদী তাহার ছেলে নিখোঁজ মর্মে এলাকায় মাইকিং করেন। এমতাবস্থায় বাদীর ছেলেকে খোঁজাখুঁজি কালে গত ৩০ মার্চ দুপুর অনুমান ৩.৪৫ মিনিটের সময় সেতু বাজারের পাশে অনেক চিল্লাচিল্লি শুনে চাষি মোঃ মজমুল হক (৪০), পিতা- মৃত আজিজার রহমান, সাং- ভাদাই খোলাহাটি, থানা- আদিতমারী, জেলা- লালমনিরহাট এর তামাক ক্ষেতে গিয়ে বাদী উক্ত ক্ষেতে তার ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। হত্যার পর রোমানকে তামাক পাতা ও কিছু মাটি দ্বারা চাপা দেওয়াবস্থায় দেখতে পায়। বাদী সহ স্থানীয় লোকজন বাদীর ছেলেকে মৃত্যু অবস্থায় পেয়ে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে সংবাদ দিলে আদিতমারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রোমানের লাশ সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেন। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে বাদী অজ্ঞাতনামা আসামী উল্লেখ করে আদিতমারী থানায় এজাহার দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার পান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম।
হত্যাকান্ড সংক্রান্তে সংবাদ প্রাপ্তীর সাথে সাথেই লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পিপিএম-সেবা মহোদয় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ আলমগীর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ- সার্কেল) এ. কে. এম ফজলুল হক ও অফিসার ইনচার্জ, আদিতমারী থানা মাহমুদ উন নবী, ও তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম, মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের নিমিত্তে এবং অজ্ঞাতনামা আসামী সনাক্তপূর্বক আসামী গ্রেফতারের জন্য একাধিক টিম গঠন করা সহ প্রয়োজনীয় সকল ধরনের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। দিকনির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত সক্রান্ত সকল বিষয় সামনে রেখে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার পর স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্য এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীকে সনাক্ত করা হয়। অতঃপর অফিসার ইনচার্জ এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সহ আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিশু মোঃ আশিকুর রহমান (১৪), পিতা- মোঃ মুছা মিয়া, সাং- ভাদাই খোলাহাটি, থানা- আদিতমারী, জেলা- লালমনিরহাটকে গ্রেফতার করে। গ্রেপ্তারের পর শিশুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মোঃ আশিকুর রহমান বিভিন্ন ধরনের চুরির অপরাধের সাথে জড়িত। ঘটনার অনুমান এক মাস আগে আশিকুর স্থানীয় জনৈক মোকসেদুল এর মায়ের একটি ছাগল চুরি করে হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। চুরি করার সময় ভিকটিম রোমান দেখে ফেলে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকায় সালিশি বৈঠকও হয়। উক্ত সালিশি বৈঠকে মোঃ আশিকুর রহমানকে অভিযুক্ত করে ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তারপর থেকে রোমান শিশু আশিকুর কে দেখলে ছাগলচোরা, ছাগলচোরা বলতে থাকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আশিকুর ভিকটিম রোমানকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আশিকুর ঘটনার দিন ২৯/০৩/২৪ ইং তারিখ বিকাল অনুমান সাড়ে ৪ টার সময় ভিকটিম রোমানকে ডেকে নিয়ে যায় এবং তার সাথে বিভিন্ন ভাবে সখ্যতা তৈরি করে খেলাধুলা করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ওইদিন সন্ধা সোয়া ৬ টার সময় আশিকুর ভিকটিম রোমানকে জনৈক মজমুল হক এর তামাক ক্ষেতে নিয়ে গলাচিপে শ্বাসরোধ করে এবং ঘাড় মটকে হত্যা করে। অতঃপর ভিকটিমের শরীর উক্ত তামাক ক্ষেতের দুই সারির মাঝে ড্রেনের মধ্যে শুয়াইয়ে কিছু তামাক পাতা এবং মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে রাখে। গ্রেফতারকৃত শিশু আশিক বিজ্ঞ আদালতে হত্যাকান্ডের কারনসহ হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বিষয়ে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। মামলাটির তদন্ত অব্যাহত আছে। পরবর্তী তদন্তে ঘটনার বিষয়ে আরো বিস্তারিত প্রকাশ পাইবে।
What's Your Reaction?