সকল আন্তর্জাতিক আইন মেনে নাবিক সহ জাহাজ উদ্ধার করা হয়েছে--সংবাদ সম্মেলনে মালিকপক্ষ

মো: সিরাজুল মনির,চট্রগ্রাম ব্যুরো
Apr 14, 2024 - 12:53
Apr 14, 2024 - 12:53
 0  12
সকল আন্তর্জাতিক আইন মেনে নাবিক সহ জাহাজ উদ্ধার করা হয়েছে--সংবাদ সম্মেলনে মালিকপক্ষ

সকল প্রকারের আন্তর্জাতিক আইন মেনে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ নাবিক ৩২ দিন পর মুক্ত করা হয়েছে। দুপুরে চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয় জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের পক্ষ থেকে। কত টাকা মুক্তিপণ দেয়া হয়েছে তার কোন তথ্য দেয়া যাবে না বলেও মালিক পক্ষ থেকে জানানো হয়। বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ছেড়ে যান। তখন সোমালিয়ান সময় রাত ১২টা। এর আগে সোমালিয়ান সময় বিকাল ৩টা থেকে ৪টার দিকে মুক্তিপণের ডলারভর্তি ব্যাগ একটি ছোট উড়োজাহাজ থেকে সাগরের পানিতে ফেলা হয়।

সকল নাবিক অক্ষত আছেন কিনা নিশ্চিত হওয়া, মুক্তিপণের ডলারভর্তি বস্তা সাগরে ফেলা, সেগুলো গুণে দেখা এসব নিয়ে শনিবার বিকাল থেকে নানা নাটকীয়তা চলছিল। নাবিকরা বুঝতে পারছিলেন কিছু একটা হতে চলছে। তারা দূর থেকে তা দেখলেও মুক্তির মাহন্দ্রক্ষণ এত দ্রুত চলে আসবে তা নিশ্চিত ছিলেন না।

জলদস্যুরা জিম্মি জাহাজ থেকে নেমে যাওয়ার পর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের উদ্যেশ্যে যাত্রা করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজের পাহারায় জাহাজটি সোমালিয়ান সমুদ্রসীমা অতিক্রম করছে।

আরব আমিরাতের বন্দরে পৌঁছতে আরো ৪ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেখান থেকে নাবিকরা বিমানে করে দেশে ফিরবেন। নাবিকদের অন্য একটি দলের তত্ত্বাবধানে এমভি আবদুল্লাহ থেকে মালামাল খালাসের কাজ চলবে।

জলদস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যাওয়ার পর বাংলাদেশে স্বজনদের সাথে কথা বলেন জাহাজে জিম্মি থাকা কয়েকজন নাবিক। এদের একজন মুক্তিপণ প্রদান ও মুক্তি পাওয়ার মুহুর্তটি কেমন ছিল স্বজনদের কাছে তুলে ধরেন।

তিনিই মূলত জাহাজের মালিক পক্ষ ও জলদস্যুদের মধ্যে দোভাষী হিসাবে সমন্বয়ের কাজ করতেন। হঠাৎ করে জাহাজের ডেকে সব নাবিকদের ডাক পড়ে। কাছাকাছি এলাকায় একটি ছোট উড়োজাহাজ টহল দিতে দেখেন নাবিকরা।

তখন বুঝতে পারছিলেন না-কী ঘটতে যাচ্ছে জানিয়ে ওই নাবিক বলেন, জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিকের মধ্যে ২২জন সেখানে উপস্থিত হন। একজনকে না দেখে দোভাষী জলদস্যুর সাথে আবার ফোনে কথা বলা শুরু হয়। জলদস্যু প্রতিনিধি উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন। পরে অন্য নাবিককে ডেকে নিয়ে আসা হয় জাহাজের ডেকে।

২৩ নাবিকই অক্ষত ও সুস্থ আছেন নিশ্চিত হওয়ার পর এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে কিছুটা দূরে সাগরের পানিতে ছোট উড়ো জাহাজটি থেকে তিনটি বস্তা ফেলা হয়। তখন সোমালিয়ান সময় বিকাল ৪টা, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা। জাহাজের সাথে বাঁধা অবস্থায় থাকা কয়েকটি স্পিডবোট দ্রুত গিয়ে সেসব বস্তা তুলে আনেন। জাহাজে এসে বস্তার ভেতর থেকে ডলার গুণে নিশ্চিত হণ মুক্তিপণের অর্থ যথাযথ আছে কিনা।

জিম্মি নাবিক জানান, জলদস্যুরা এতদিন বেশ ভালো ব্যবহার করলেও মুক্তিপণ পাওয়ার পরপরই তাদের মধ্যে আবার আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয়। ভাষা হয়ে যায় কর্কশ। মুক্তিপণ পাওয়ার পর আরো ৮ ঘন্টা জাহাজে ছিলেন জলদস্যুরা। রাত ১২টার দিকে স্পিডবোটে তারা জাহাজ ত্যাগ করে।

তবে ঠিক কত টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে জিম্মি জাহাজ ও নাবিকেরা মুক্ত হয়েছেন তা কেউই নিশ্চিত করেন নি।

গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতে যাওয়ার সময় ভারত মহাসগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান উপকুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

৯দিনের মাথায় জলদস্যুরা মুক্তিপণের জন্য যোগাযোগ শুরু করেন। বেশ কিছুদিন দরকষাকষির পর ৩২দিনের মাথায় মুক্তি পেল নাবিকেরা। এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মনি একইভাবে জলদস্যুদের হাতে আক্রান্ত হন। ১০০ দিনের মাথায় সেবার নাবিকেরা মুক্ত হন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow