অনিয়মের অভিযোগে বেরোবির ওয়াজেদ রিসার্চে দুদকের হানা

মাসফিকুল হাসান, বেরোবি প্রতিনিধি, রংপুরঃ
Mar 12, 2025 - 14:41
 0  4
অনিয়মের অভিযোগে বেরোবির ওয়াজেদ রিসার্চে দুদকের হানা

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর সেখানে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১২ মার্চ) দুদকের রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হুসাইন শরিফের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল ইনস্টিটিউটটিতে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তা মো. হুসাইন শরিফ জানান, ২০০৯ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিল মিয়ার উদ্যোগে এই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুমোদন ও নীতিমালা ছাড়াই তিনি কয়েকজন রিসার্চ অফিসার ও ফেলো নিয়োগ দেন। ফলে তাদের ডিগ্রি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, এ ইনস্টিটিউটে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে কার্যত কোনো কাজ না করেই বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। অভিযান চালিয়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন কমিশনে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তি শুরু হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুমোদন না থাকায় ২০২২ সালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এবং কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এরপর থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য গবেষণা কার্যক্রম নেই বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, বর্তমানে ইনস্টিটিউটে সাতজন কর্মকর্তা, একজন কম্পিউটার অপারেটর ও একজন এমএলএসএস কর্মরত রয়েছেন। কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. প্রসন্নজিৎ সরকার, সাবেক উপাচার্যের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলিল, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধানের স্ত্রী ডেপুটি রেজিস্ট্রার সিরাজুম মুনিরা, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ও মুখতার ইলাহীর বোন মেহজাবিন ইলাহী এবং রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ResearchGate-এ কর্মকর্তাদের গবেষণা কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশেরই কোনো গবেষণা নেই। শুধু ড. প্রসন্নজিৎ সরকার ও আবু সায়েমের কয়েকটি গবেষণা প্রবন্ধ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকলেও গবেষণায় নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে পারেন না, তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, "আমি যোগদানের পর জানতে পারি, আমি নিজেই এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করি। ২০২৪ সালের মে মাসে ইনস্টিটিউট অনুমোদন পেলেও এখনো কোনো নীতিমালা তৈরি হয়নি। আমি নিজ উদ্যোগে নীতিমালা তৈরির কাজ করছি।"

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow