আক্কেলপুরে দুটি এনজিও অফিসে তালা ঝুলিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাপাত্তা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি ও পারভিন কল্যাণ সংস্থা নামে দুটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ছয়টি শাখা কার্যালয় চালু করা হয়েছিল। সেই শাখাগুলোর মাঠকর্মীরা গ্রামের সহজ-সরল লোকজনদের কাছ থেকে অধিক মুনাফা দেয়ার নাম করে দীর্ঘমেয়াদী আমানত ও স্বপ্লমেয়াদী এবং স্থায়ী ডিপোজিট করান। আজ রবিবার সকালে অফিসে এসে অফিস বন্ধ দেখে কর্মকর্তাদের ফোন দেন। বিনিয়োগকারীরা দুটি এনজিওর মালিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকেই এখন মুঠোফোনেও পাচ্ছেন না। এতে প্রায় আড়াই শতাধিক ছোট-বড় বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। দুটি এনজিও ছয়টি শাখায় তাঁদের প্রায় ৮৫ কোটি টাকা খোয়া যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এক সপ্তাহ ধরে পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার চারটি ও পাঁচ দিন ধরে সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের দুটি কার্যালয় বন্ধ রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালিয়ে গেছেন। খবর পেয়ে প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরতের আশায় এই দুটি এনজিওর শাখা কার্যালয়গুলোতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। প্রায় ৭-৮ বছর ধরে দুটি এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রামাঞ্চলের সহজ লোকজনদের কাছ থেকে দীর্ঘ মেয়াদী এক কালীন আমানত ও স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করেন। ওই দুটি এনজিওর মালিক নওগাঁ সদর উপজেলার খলিশাকুড়ির সাহিদুর রহমান শাহিন। বিনিয়োগকারীরা দুটি এনজিওর মালিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকেই এখন মুঠোফোনেও পাচ্ছেন না। এতে প্রায় আড়াই শতাধিক ছোট-বড় বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। দুটি এনজিও ছয়টি শাখায় তাঁদের প্রায় ৮৫ কোটি টাকা খোয়া যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভূক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আক্কেলপুর উপজেলার ওই দুটি সংস্থার ছয়টি শাখা কার্যালয় রয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার চারটি শাখা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মালিকের সঙ্গে নওগাঁর প্রধান কার্যালয়ে জরুরিসভা রয়েছে বলে জানিয়ে সবাই চলে যান। এরপর থেকেই চারটি শাখা কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। কর্মকর্তা কর্মচারীরা কেউই আর ওইদিনের পর শাখা কার্যালয়ে আসেননি। গত বুধবার সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা একই কথা বলে চলে যান।
রোববার পর্যন্তু ওই দুটি এনজিও শাখা কার্যালয় তালাবন্ধ রয়েছে। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরতের আশায় শাখা কার্যালয়ে ভিড় করছেন।
আক্কেলপুর পৌরশহরের পূর্ব রাজকান্দা মহল্লার নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসায় পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার শাখা কার্যালয় ছিল। বাসার মালিক নুরুল ইসলাম জানান, তিন বছর আগে তার বাসা ভাড়া নিয়ে পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যালয় করা হয়েছিল। জানুয়ারির ৫ তারিখে বাসা ভাড়ার টাকা দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নওগাঁয় প্রধান কার্যালয়ে মালিকের সঙ্গে জরুরি সভা আছে বলে চলে গেছেন। আজ রোববার পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর কেউ অফিসে আসেননি। অফিস তালা ঝুলছে। প্রতিদিনই লোকজন টাকা ফেরত নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।তিনি লোকজনের ভয়ে বাড়ির সামনে থাকা সামনের সাইনবোর্ড খুলে রেখেছেন। বাড়ির মালির স্ত্রী শারমিন বলেন, আমি নিজেও। তিন মাস আগে পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থায় এক লাখ টাকা রেখেছি। দুই মাসে দেড় হাজার টাকা করে লাভ পেয়েছি। এখন অফিস বন্ধ। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ আসছেন না। তাদের সবাই ফোনও বন্ধ রেখেছেন।
উপজেলার রামশাল গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ভাড়া বাসায় চার বছর আগে পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থার শাখা খোলা হয়। বাসার মালিক মোফাজ্জল হোসেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে অফিস তালাবন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই চলে গেছেন। এখনও তাদের কেউ অফিসে আসেনি। প্রতিদিনই লোকজন টাকা ফেরতের জন্য ভিড় করছে। সাইদুল নামে একব্যক্তি বলেন, আমি নিজে আড়াই লাখ টাকা আমানত রেখেছি। আমার আত্বীয় প্রবাসী জাহিদুল ২৫ লাখ টাকা আমানত রেখেছেন।
প্রায় ছয় বছর আগে চন্দনদিঘী বাজারে সমতা ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি লিমিটেডের শাখা কার্যালয় খোলা হয়। প্রতিদিনের কিস্তির ভিত্তিতে ঋণদান পাশাপাশি প্রতি মাসে লাখে ২ হাজার টাকার মুনাফার লোভ দেখিয়ে লোকজনদের কাছে আমানত সংগ্রহ শুরু করে। ওই শাখার ১০-১২ জন গ্রাহক জানান, ৩০ কোটি টাকা ওপর আমানত রয়েছে। বুধবার থেকে অফিসে তালা ঝুলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবার ফোন বন্ধ। তারা সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
মোহনপুর বাজার আলাউদ্দিন মার্কেকেটের পাশাপাশি পারভিন ও সমতা এনজিওর কার্যালয়। দুটি কার্যালয়ই বন্ধ রয়েছে। রোববার দুপুরে দুটি কার্যালয়ে সামনে কয়েক জন বিনিয়োগকারীকে হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে। একারণে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মালিকেরও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, পারভিন সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমতি লিমিটেড নামে দুটি এনজিওর শাখা কার্যালয়গুলো তালাবন্ধ রয়েছে। অনেকে বেশি মুনাফার লোভে পড়ে এই দুটি এনজিওতে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে বিনিযোগকারীরা কেউ এখনও অভিযোগ করেননি।
What's Your Reaction?