আখাউড়া পাড়বিহীন পুকুর, বিলীন হচ্ছে সরকারি রাস্তা
গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে পুকুর আছে, কিন্তু পুকুরের পাড় নাই। রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা পর্যন্ত পুকুর বানিয়ে রাখা হচ্ছে। রাস্তা ব্যবহার হচ্ছে পুকুরের পাড় হিসেবে। তাতে বছর না যেতেই কোটি টাকার রাস্তা ধ্বসে পড়ছে পুকুরের পানিতে। বিজয়নগর গ্রামীণ জনপদের রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা পুকুরগুলোর কারণে রাস্তার এরকম ভেঙে পড়ার চিত্র সবখানেই চোখে পড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এ দৃশ্য অহরহ ই চোখে পড়ে।
অবাধে খনন করা পাড়বিহীন পুকুরগুলোর কারণে একদিকে জনদুর্ভোগ বাড়ে, অন্যদিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়। সমস্যা থেকে উত্তরণে গ্রামীণ রাস্তার পাশে পুকুর খননে সতর্ক করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়, নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গ্রামীণ সড়কের ধার ঘেঁষে পুকুর, সেচ নালা খনন করা দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তি রাস্তার ধার ঘেঁষে পুকুর, খাল বা কূপ অথবা সেচনালা তৈরি করলে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নিজ খরচে সুরক্ষা ঢাল নির্মাণ করবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে তা অপসারণ, খনন বা পুনঃখনন, বন্ধ বা ভরাট করার আদেশ দিতে পারেন।
আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭০.৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা রাস্তা রয়েছে প্রায় ২৬৪.১০ কিলোমিটার। মোট কাঁচা রাস্তা ৪০৬.৭৭ কিলোমিটার। প্রত্যেকটি গ্রামীণ এলাকায় রাস্তার ধারে রয়েছে অসংখ্য পুকুর। ছোট-বড় পুকুর মিলে রাস্তাকে পাড় হিসেবে ব্যবহার করে পুকুর খনন করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে আরো জানান, এই সব পুকুরের মালিকদের একাধিক চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে পুকুরের পাড় রেখে খনন করা বা পাশে রিটার্নিং ওয়াল দিয়ে পাড় রক্ষা করার অনুরোধ জানানো হলেও তারা সেটা আমলে নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সরকারি ভাবে রিটার্নিং ওয়াল করার মাধ্যমে রাস্তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩৬% রাস্তা রিটার্নিং ওয়াল সরকারি খরচে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা তৈরি করে। কিছুদিন না যেতেই এসব রাস্তা পুকুরে ভেঙে পড়ছে। অল্প অল্প করে ভাঙতে ভাঙতে একসময় পুরো রাস্তা বিলীন হয়ে যায় পুকুরে। এতে পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বছরের পর বছর এসব ভাঙা রাস্তা আর মেরামত হয় না। রাস্তার ধারে পুকুর খনন করলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না
আখাউড়া উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে পুকুর মালিকদের সতর্ক করলেও তাঁরা শুনছেন না। পুকুরের নিজস্ব পাড় না রাখায় অল্প দিনেই কোটি টাকার রাস্তা পুকুরে বিলীন হচ্ছে। সরকারিভাবে এত পুকুরের পাড় মেরামত সম্ভব না। আমরা পুকুরগুলোর তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আশিকুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ‘আমরা সরকারি টাকায় রাস্তাগুলো তৈরি করি। অথচ সেই রাস্তা কিছুদিন না যেতেই পুকুরে ধসে পড়ে। পুকুর মালিকদের সচেতনতা প্রয়োজন। ব্যক্তিগত পুকুরের জন্য সরকারি সম্পদ নষ্ট করা আইনগত অপরাধ।
What's Your Reaction?