আজকের শিশুরা একাত্তরের যুদ্ধ দেখেনি-বধ্য ভূমিতে বসে শুনলো যুদ্ধের কাহিনী
স্বাধীনতার ইতিহাসের ভাজে-পাক বাহিনীর নৃশংসতার খোঁজে-এমনই এক ব্যতিক্রম আয়োজনের মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের যুদ্ধের কাহিনী শুনালো নগরকান্দা সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরের নগরকান্দা সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমির প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন মিয়া ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
একাত্তরের যুদ্ধের ঘটনাবলী জানাতে ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান উপজেলার কোদালিয়া শহীদ নগর গ্রামের বধ্যভূমিতে। সেখানে সাতত্রিশ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বধ্যভূমিতে যেয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে বধ্যভূমিতে বসে শিক্ষার্থীদের রণাঙ্গনের গল্প শুনান- যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন খান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন খান শিক্ষার্থীদের জানান, মাত্র পনের জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে এই কোদালিয়া শহীদ নগর গ্রামের দক্ষিণ পাশে দিঘলিয়া বিলে পাক বাহিনীর সাথে একাত্তুরের উনত্রিশ মে সম্মুখ যুদ্ধ করেন।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে স্থানীয় জনগণ দেশীয় ঢাল ছরকী বল্লম নিয়ে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সে যুদ্ধে উনত্রিশ জন পাক বাহিনী সদস্য নিহত হয়।
পরে প্রতিশোধ নিতে পাক বাহিনী পহেলা জুন কোদালিয়া শহিদনগর গ্রামে ঢুকে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সাইত্রিশ জন নিরীহ নারী পুরুষকে হত্যা করে এবং সে সময় সাত জন শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। আহত ওইসব শিশুরা ক্ষতর যন্ত্রণা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন।
শহীদ পরিবারের বেঁচে যাওয়া অপর এক কিশোর- বর্তমানের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন নিলু শিক্ষার্থীদের কাছে তার বেদনার্ত স্মৃতি তুলে ধরেন।
প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন মিয়া জানান, শিক্ষার্থীদের একাত্তর সম্পর্কে জানাতে বধ্যভূমিতে আনা হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা দেশ সম্পর্কে জানতে পারে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মুখে জানছে যুদ্ধ কালীন ঘটনা। জানতে পারছে এই বধ্যভূমির ইতিহাস।
শিক্ষার্থী তাসফিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলে,এখানে এসে আমি যুদ্ধ কালীন অনেক কিছু জানতে পেরেছি যা আমার জীবনে সহায়ক হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর জেলা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান শরিফ, দৈনিক খোলাচোখ পত্রিকার সম্পাদক ও নগরকান্দা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুব আহাদ সহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সহকারী শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া।
What's Your Reaction?