আলফাডাঙ্গায় পাঁচ দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ সম্পন্ন

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় হজরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) স্মরণে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী বাৎসরিক ওরশ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আলফাডাঙ্গার ‘শাহসূফী’ খ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক আব্দুল খালেক মুন্সি কাদরিয়া (ডক সাহেব) প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় দরবার শরিফে আয়োজিত ৪৭তম এই ওরশে দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো ভক্ত-আশেকান অংশগ্রহণ করেন।
গত ৫ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ৯ মার্চ পর্যন্ত আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ইছাপাশা গ্রামে অবস্থিত বিশ্ব স্মৃতি কাদের মঞ্জিল প্রাঙ্গণে আয়োজিত ওরশের প্রথম দিন থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ এসে দরবার শরিফে ভিড় জমাতে থাকেন। প্রতিবছরের মতো এবারও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মিলাদ, জিকির-আসকার, ইসলামি ভাবসংগীত এবং বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে ওরশ পালিত হয়। আগত ভক্তদের জন্য বিনামূল্যে তবারকের ব্যবস্থাও রাখা হয়।
দরবার শরিফের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. ওহিদুজ্জামান মুন্সী (নাঈম) বলেন, “এই দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা আমার দাদা হুজুর মহান আধ্যাত্মিক সাধক সুলতানুল আউলিয়া হজরত শাহ সূফি আব্দুল খালেক ডক সাহেব ছিলেন এক অনন্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। তার জীবন ছিল আত্মত্যাগ, মানবসেবা ও ইসলামি শিক্ষা প্রচারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবতার কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন। তার আদর্শ ও শিক্ষার আলোতে হাজারো মানুষ আলোকিত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ওরশ শুধু ধর্মীয় আচার নয়; বরং মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামের সুফিবাদের শিক্ষা ও মানবতার কল্যাণে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
দরবার শরিফের আহ্বায়ক মো. ওবায়দুর রহমান মুন্সী ও মো. সিরাজুল হক মুন্সী বলেন, “এই দরবার শরিফ শুধু আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্র নয়, বরং সমাজকল্যাণ ও মানবতার সেবার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের আদর্শ অনুসরণ করে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই ওরশ মোবারকের মাধ্যমে ইসলামি শিক্ষার প্রচার ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে চাই।”
ওরশে আগত ভক্তদের মধ্যে মো. মাহফুজার বলেন, “আমি প্রতিবছর এই ওরশে আসি এবং ৪৭ বছর ধরে তবারক রান্নার কাজে নিয়োজিত আছি। এখানে এসে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি পাই এবং আমার মন শান্তিতে ভরে যায়।”
এক তরুণ ভক্ত মো. আল আলামিন সরদার বলেন, “আজকের সমাজে এমন আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখানে এসে আত্মিক উন্নতির জন্য অনুপ্রাণিত হই। তাই আগত ভক্তদের সেবায় নিজেকে পাঁচ দিনই নিয়োজিত রাখি।”
প্রায় চার যুগেরও বেশি সময় ধরে শাহ সূফী আব্দুল খালেক মুন্সি কাদরিয়া (ডক সাহেব) তার নিজ গ্রাম ইছাপাশায় বিশ্ব স্মৃতি কাদের মঞ্জিল প্রতিষ্ঠা করেন, যা ভক্তদের জন্য আধ্যাত্মিক তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতি সপ্তাহের বুধবারে এখানে সাপ্তাহিক জলসা এবং প্রতিবছর বাংলা ২০-২৪ ফাল্গুন পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, শাহ সূফী আব্দুল খালেক মুন্সি কাদরিয়া (ডক সাহেব) ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের পরও তার দেখানো পথে দরবার শরিফের কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং এই ওরশ তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আয়োজিত হয়।
What's Your Reaction?






