আশুগঞ্জে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ঝুঁকিতে কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান

মাহমুদুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ
Mar 20, 2025 - 21:03
 0  4
আশুগঞ্জে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ঝুঁকিতে কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর নির্ধারিত সীমানার বাইরে থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এতে কেপিআইভুক্ত (Key Point Installation) একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, যে কোনো সময় নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পেয়ে এর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে, যা মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জেলা ও উপজেলার ছাত্রদল এবং বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নুসরাত জাবীন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের (এএফসিএল) মেঘনা নদীর ওয়াটার ইনটেক ও ডেসপাচ জেটি এলাকায় চর জেগে উঠেছে। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের ভিত্তিতে সেখান থেকে বালু উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর ঢাকা-সিলেট করিডোর (ছয় লেন) মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বালুর যোগান নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর এএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেলা প্রশাসকের কাছে নির্ধারিত এলাকাটি থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি চান। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস কামাল ইন্টারন্যাশনালকে নির্ধারিত সীমানার মধ্যে থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ হলেও বাস্তবে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান ও তার সহযোগীরা মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন এবং নির্ধারিত সীমানার বাইরেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, মেঘনা নদীতে লাল নিশানা টাঙিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হলেও বালু খেকোরা তা উপেক্ষা করে নদীর মাঝখান থেকে প্রায় ৯-১০টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে।

নদীর তীর ঘেঁষে আশুগঞ্জ অংশে রয়েছে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি, মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেড ও মিডল্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড। অপরদিকে, কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার অংশে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসির সার গুদাম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপো।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে নদীর স্বাভাবিক গতি পরিবর্তন হয়ে উল্লিখিত কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়বে।

ভৈরব বাজার যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপো ইনচার্জ মতিউর রহমান ও বিএডিসির সার গুদামের সহকারী পরিচালক শিপন চন্দ্র সরকার বলেন, "অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠান সব সময় ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।"

এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, "আমরা নির্ধারিত সীমানা থেকেই বালু উত্তোলন করছি। তবে এই কাজ চলার সময় বিভিন্ন গুঞ্জন ওঠে, যা স্বাভাবিক।"

এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ বলেন, "বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, "আমরা বালু উত্তোলনকারীদের ডেকে নির্ধারিত সীমানার মধ্যেই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। যদি কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্দ করা হবে।"

স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের এলাকাগুলো মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। তারা বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow