ইউএনও অফিসের কর্মচারীর স্ত্রীর নামে কোটি টাকার সম্পদ, দুদকের মামলা

মাহমুদুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
Jul 4, 2024 - 16:37
 0  9
ইউএনও অফিসের কর্মচারীর স্ত্রীর নামে কোটি টাকার সম্পদ, দুদকের মামলা

ব্যবসা থেকে বছরে আয় পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এসব আয় থেকে করা হয়েছে পাঁচ তলা বাড়ি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন। অথচ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যাচাইকালে ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো ধরণের নথি পাওয়া যায়নি। এমন অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মৌড়াইলের বাসিন্দা শিল্পী রানী ঘোষের বিরুদ্ধে (৪২)। তার স্বামী মিহির কুমার ঘোষ বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত। 

সম্পত্তির গরমিলে ওই দম্পত্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। বুধবার (৩ জুলাই) সকালে দুদকের সমন্বিত কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-সহকারি পরিচালক মো. ইমরান খান তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। স্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় মিহির কুমারকেও আসামি করা হয়। অন্য মামলায় মিহির কুমার একমাত্র আসামি। দুদক কুমিল্লার উপপরিচালক মোঃ ফজলুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মিহির ঘোষের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় ও তার স্ত্রী শিল্পী ঘোষের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে মিহির কুমার ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুদকের দায়ের করা মামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সম্পদ বিবরণী দাখিল নিয়ে সমস্যার বিষয়টি আরো আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে দুদক অনুসন্ধান শেষে শিল্পী রানী ঘোষ ও তার স্বামী মিহির কুমার ঘোষের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য পান। দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারামতে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট স্বপ্না রানীর কাছে সম্পদ বিবরণী নোটিশ ও ফরম জারি করা হয়। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুদকের কুমিল্লার সমন্বিত কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী ফরম পূরণ করে পাঠান শিল্পী। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে শিল্পী ঘোষ ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮২ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে ৩৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৬ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পায় দুদক। পারিবারিকসহ অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় আট লাখ ২৬ হাজার ২৯১  টাকা। পারিবারিক ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ তার নামে মোট ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৮ টাকার সম্পদ পায় দুদক। জানা যায় শিল্পী রানী ২০১০-১১ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন। সে সময় গৃহ সম্পদ ও ব্যবসা থেকে তার আয় ছিল ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৯ টাকা। শিল্পীর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সম্পদের তারতম্য পাওয়া যায়। তার জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩৯ টাকা। তিনি সম্পদ বিবরণীতে ৫২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৩ টাকার সম্পদ উল্লেখ করলেও দুদক অনুসন্ধানে পায় ৫৫ লাখ ২৪ হাজার ৬৭ টাকা। তিনি সম্পদ বিবরণীতে দুই লাখ ৮৯ হাজার ২৪৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছে। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১০-১১ সালের আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই আয়বর্ষে ব্যবসা থেকে তিনি আয় দেখান পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। কিন্তু সে সময় ব্যবসার পুঁজি দেখান মাত্র দুই হাজার টাকা। এতে বুঝা যায় যে, আয়কর নথি খোলার পূর্বে তার নামে কোনো ব্যবসা ছিল না। তার স্বামী মিহির কুমার অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ দিয়ে ২০১০-১১ সালে পাঁচ তলাবিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করেন। কারণ দুদকের অনুসন্ধানকালে শিল্পী ঘোষের ব্যবসার বিপরীতে কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি। আরেক মামলা সূত্রে জানা যায়, মিহির কুমার ১৯৯৬ সাল থেকে সরকারি চাকুরিতে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি সম্পদ বিবরণীতে ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৫ লাখ ১০ হাজার ৯৬৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেন। যাচাইকালে তার নামে ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেলেও ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৯১ টাকার অস্থাবর সম্পদ পায় দুদক। তিনি তার সম্পদ বিবরণীতে তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭২২ টাকার সম্পদের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করেন।
দুদকের দেওয়া তথ্যমতে, সম্পদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিল্পী ঘোষ তার স্বামী মিহিরের অবৈধ সহায়তায় অসৎ উদ্দশ্যে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আর মিহির কুমার ঘোষ দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা হিসাব/তথ্য প্রদানসহ তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭২২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 



What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow