কাপ্তাইয়ে ফুল ভাসিয়ে তনচংগ্যাদের ঐতিহ্যবাহী বিষু উৎসব শুরু

"আমার সংস্কৃতি, আমার অহংকার"—এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে কর্ণফুলী নদীতে ফুল ভাসিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে শুরু হয়েছে তনচংগ্যা সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বিষু উৎসব। ফুলবিষু, মূলবিষু ও নববর্ষ—এই তিন পর্বে বিভক্ত এ উৎসব।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে বাংলাদেশ তনচংগ্যা কল্যাণ সংস্থা কাপ্তাই অঞ্চল কমিটি এবং দেবতাছড়ি-রৈস্যাবিলি অঞ্চল কমিটির যৌথ উদ্যোগে কর্ণফুলী সরকারি কলেজ ঘাটে নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা ফুল ভাসিয়ে দেন। কলাপাতায় সাজানো ফুল নদীতে ভাসিয়ে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে প্রার্থনা করেন তারা—পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরের শুভ কামনায়।
পরে সকাল ১০টার দিকে বড়ইছড়ি বাজার এলাকা থেকে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি বের করা হয়। র্যালিতে শত শত নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে এবং তনচংগ্যাদের ঐতিহ্যবাহী উবাগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে র্যালিটি কাপ্তাই সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় শ’খানেক শিশু-কিশোর ও বিভিন্ন বয়সী মানুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে ফুল ভাসাতে কর্ণফুলী নদীতীরে ভিড় করেন।
অনুষ্ঠানে বিষু উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অরুণ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও রুপময় তনচংগ্যার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাপ্তাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্বরূপ মুহুরী এবং তনচংগ্যা কল্যাণ সংস্থার কাপ্তাই অঞ্চল সভাপতি অজিত কুমার তনচংগ্যা।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষু উৎসবের প্রথম দিন ফুলবিষুতে বনজ ফুল ও লতা-পাতায় ঘর সাজানো হয়। সকালে সবাই ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নদীতে ফুল ভাসান মা গঙ্গার উদ্দেশে, যাতে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে সারা বছর আশীর্বাদ করেন। দ্বিতীয় দিন মূলবিষুতে তৈরি হয় বিন্নি চালের গুড়ি দিয়ে মু-পিঠা। আর তৃতীয় দিন নববর্ষ উপলক্ষে বৌদ্ধ বিহারে প্রার্থনার মাধ্যমে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
নদীতে ফুল ভাসাতে আসা লাকী তনচংগ্যা বলেন, “সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘর সাজাই, ফুল সংগ্রহ করি। তারপর নদীতে ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় দেই, নতুন বছরকে বরণ করি।”
উমা চাকমা জানান, “এক ধরনের লতার বীজ নিয়ে আমরা ‘ঘিলা খেলা’ খেলি। পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কিশোর-তরুণরা আসে এই খেলায় অংশ নিতে। এটি যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।”
আয়োজকদের মতে, রবিবার নববর্ষ উপলক্ষে পিঠা ও মিষ্টান্ন পরিবেশনের আয়োজন এবং সোমবার সন্ধ্যায় বৌদ্ধ বিহারে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিষু উৎসব।
What's Your Reaction?






