কাপ্তাইয়ে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

বর্ষবরণ উপলক্ষে পার্বত্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরমে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতি বছর এই উৎসব উদযাপন করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মারমারা।
চলতি বছরের উৎসব ১৩ এপ্রিল ‘পাইংছোঁয়াক’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হবে এবং চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ‘রি-আকাজা’ বা মৈত্রী পানি বর্ষণ, যেখানে নারী-পুরুষ একে অপরকে পানি ছিটিয়ে পুরাতন বছরের গ্লানি দূর করে নববর্ষকে বরণ করে নেন।
উৎসবকে কেন্দ্র করে চিৎমরমের বিভিন্ন ক্যাং ও বৌদ্ধ বিহারে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সংস্কার ও আলোকসজ্জার কাজ। প্রস্তুত করা হচ্ছে সাংস্কৃতিক মঞ্চ, আয়োজন করা হচ্ছে র্যালি ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দোকানপাটে চলছে কেনাকাটার ধুম। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষ এখন উৎসবের আমেজে মগ্ন।
চিৎমরম সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক উথোয়াইমং মারমা বলেন, “এবার দুই দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব আয়োজন করছি। প্রস্তুতির প্রায় শেষ পর্যায়ে আমরা পৌঁছে গেছি। আশা করছি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব উদযাপন করতে পারব।”
কমিটির সদস্য সচিব মং মারমা জানান, “১৫ এপ্রিল মৈত্রী পানি বর্ষণ হবে। এটি মারমা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সাংগ্রাই উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও খেলাধুলার বিকাশ ও সংরক্ষণে ভূমিকা রাখি।”
কমিটির যুগ্ম-সচিব সাচিংউ মারমা বলেন, “সাংগ্রাই আমাদের প্রাণের উৎসব। আমরা এই সময় অনেক আনন্দ করি, পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে স্বাগত জানাই।”
চিৎমরম ইউপি সদস্য ক্যউপ্রু চৌধুরী বলেন, “সাংগ্রাই উৎসব আমাদের প্রধানতম উৎসব। এ সময় আমরা পিঠা তৈরি করি, ক্যংয়ে গিয়ে প্রার্থনা করি, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরি ও পানি খেলায় অংশ নিই। এটি আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ আনন্দঘন মুহূর্ত।”
এবারের সাংগ্রাই উৎসবে থাকবে— পিঠা তৈরি, হাজার প্রদীপ প্রজ্বালন, পবিত্র বুদ্ধস্নান, ছোয়াইং দান, সাংগ্রাই শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলোচনা সভা, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, বিচিত্র সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নতুন পোশাক পরিধান ও বিভিন্ন পাহাড়ি খাবার পরিবেশন।
চন্দ্রঘোনা থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল বলেন, “সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে বিপুল মানুষের সমাগম ঘটবে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ডিবি ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে নিরাপদে উৎসব উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
What's Your Reaction?






