কুবি শিক্ষক ইসরাত জাহান নিমনীর বিরুদ্ধে গবেষণা চুরির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি ও চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য প্রয়োজন হয় মানসম্মত গবেষণা প্রকাশনা। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহান নিমনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি এক শিক্ষার্থীর গবেষণা অনুমতি ছাড়াই নিজের নামে প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত সুলতানা জাহান "Subjugation, Marginalization and Double Colonization: A Reading of The Avarodhbasini, The Dark Holds No Terrors and The God of Small Things" শিরোনামে এম.এ. থিসিস সম্পন্ন করেন। তখন তার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ইসরাত জাহান নিমনী, যিনি তখন নোবিপ্রবিতে কর্মরত ছিলেন।
সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে, নিজের চাকরি স্থায়ীকরণের উদ্দেশ্যে ইসরাত জাহান নিমনী রিফাত সুলতানার গবেষণার একটি অধ্যায় হুবহু অনুলিপি করে এবং অন্যান্য অংশ থেকে প্যারাফ্রেজিং ও উদ্ধৃতি নিয়ে "Breaking the Silence: A Quest for Self in Shashi Deshpande's The Dark Holds No Terrors" শিরোনামে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
গবেষণাটি আন্তর্জাতিক জার্নাল International Journal of English Literature and Social Sciences-এ ১৭ নভেম্বর জমা দেওয়া হয় এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত হয়। তবে, এই প্রবন্ধে রিফাত সুলতানা জাহানকে দ্বিতীয় লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যদিও তিনি বিষয়টি অনুমোদন করেননি।
গবেষণা চুরির বিষয়টি জানতে পেরে রিফাত সুলতানা জাহান ১৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। তার অভিযোগে বলা হয়, ইসরাত জাহান অনুমতি ছাড়া তার থিসিসের ৩ নম্বর অধ্যায় হুবহু নকল করেছেন এবং অন্যান্য অধ্যায় থেকেও অনুলিপি করেছেন।
রিফাত সুলতানা জানান, ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইসরাত জাহান তার কাছ থেকে থিসিসের মূল ফাইল সংগ্রহ করেন এবং পরে ১২ নভেম্বর তাকে কল দিয়ে জানান, তিনি তাকে দ্বিতীয় গবেষক হিসেবে রাখতে চান। তবে রিফাত তাতে সম্মতি না দেওয়ার পরও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এতে রিফাত সুলতানা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, তার অন্যান্য গবেষণার ক্ষেত্রেও একই ধরনের চৌর্যবৃত্তি ঘটতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে ইসরাত জাহান নিমনীর সঙ্গে ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক ওই জার্নাল থেকে গবেষণা প্রবন্ধ সরিয়ে নিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, "আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ইসরাত জাহান নিমনী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান, যদিও তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ করেনি।
বাংলাদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চুরির ঘটনা আগেও ঘটেছে। সম্প্রতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও গবেষণা চুরির অভিযোগ উঠেছে, যা বর্তমানে তদন্তাধীন।
গবেষণা চুরি প্রতিরোধে সরকার "গবেষণা চুরি প্রতিরোধ আইন ২০২৩" প্রণয়ন করেছে, যেখানে এ ধরনের অপরাধের জন্য পদোন্নতি স্থগিত, ডিগ্রি বাতিল এবং গবেষণা তত্ত্বাবধানে নিষেধাজ্ঞার বিধান রয়েছে।
What's Your Reaction?






