কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে সবুজ টমেটো

মো: গোলাম কিবরিয়া,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি
Jan 22, 2025 - 21:23
 0  2
কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে সবুজ টমেটো

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রতি বছরের মতো এবারও টমেটোর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু এসব টমেটো পাকার সময় দিচ্ছেন না উৎপাদকরা। কম সময়ে বেশি মুনাফার আশায় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করে কৃত্রিম উপায়ে লাল টুকটুকে করছেন অপরিপক্ব সবুজ টমেটো। এ ক্ষেত্রে অপরিপক্ব সবুজ টমেটো রোদে শুকিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে প্রকাশ্যেই এমন কর্মকাণ্ড চলছে। এসব টমেটো অবাধে বিক্রিও হচ্ছে হাটবাজারে। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে এই ‘বিষ’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই টমেটো খেলে কিডনি নষ্টসহ ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ হতে পারে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে উৎপাদিত শীতকালীন টমেটোর তিন ভাগের দুই ভাগই হয় গোদাগাড়ীতে। ২০২১-২২ অর্থবছর এই উপজেলায় ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে ৫২ হাজার ৭০০, ২০২২-২৩ অর্থবছর ৩ হাজার ১৫ হেক্টরে ৯০ হাজার ৪৫০, ২০২৩-২৪ অর্থবছর ২ হাজার ২৪৫ হেক্টরে ৮৯ হাজার ৮০০ টন টমেটো উৎপাদন হয়েছে। চলতি অর্থবছর ২ হাজার ৬৭০ হেক্টরে টমেটোর আবাদ হয়েছে। মৌসুম শেষ না হওয়ায় উৎপাদনের হিসাব পাওয়া যায়নি। এবারও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি সরেজমিন গোদাগাড়ীতে দেখা গেছে, সবখানে পুরোদমে শুরু হয়েছে টমেটোর কারবার। দেখে মনে হতে পারে কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ চলছে। মোটা পলিথিন পেপারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অপরিণত কাঁচা টমেটো। এরপর টমেটোর ওপর স্প্রে করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ইথিফন গ্রুপের হরমোন। এতেই সবুজ টমেটো হয়ে উঠছে লাল টুকটুকে। পরে সেগুলো প্যাকেটজাত করে ট্রাকে পাঠানো হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

স্থানীয়রা বলেন, কৃষকসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে এসে কম দামে কাঁচা টমেটো কিনছেন। এরপর তারা খোলা জায়গায় টমেটো রোদে রেখে মাত্রাতিরিক্ত ইথিফন গ্রুপের হরমোন স্প্রে করছেন। এ হরমোন অতিমাত্রায় ব্যবহারের ফলে কাঁচা টমেটো মুহূর্তে লালবর্ণ ধারণ করছে।

উপজেলার কাদিপুর এলাকার চাষিরাও অকপটে স্বীকার করলেন হরমোন স্প্রের কথা। তারা বলেন, মৌসুমের শুরুতে স্প্রের মাধ্যমে পাকিয়ে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি করেছি আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকায়। এখন মৌসুমের শেষ পর্যায়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। স্প্রে ছাড়া কাঁচা টমেটো বিক্রি করলে মণপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কম পাওয়া যায়।

কাঁচা টমেটোকে লাল করার কৌশলও বর্ণনা করেন চাষিরা। জানান, মোটা পলিথিনের ওপর সবুজ টমেটো মেলে দিয়ে স্প্রে করে রোদে শুকানো হয়। এরপর সেগুলো গুছিয়ে ঢেকে রাখা হয় তিন দিন। পরে সেগুলো আবারও রোদে দিয়ে স্প্রে করে শুকানো হয়। এক সপ্তাহ ধরে চলে এমন কর্মকাণ্ড। এতেই অপরিপক্ব টমেটো পেকে লালবর্ণ ধারণ করে।


গোদাগাড়ীর হেলিপ্যাড এলাকায় কথা হয় এক টমেটো ব্যবসায়ীর সঙ্গে। জামালপুর থেকে এসেছেন তিনি। এই ব্যবসায়ী বলেন, পাঁচ দিন আগে চাষিদের কাছ থেকে প্রায় ৬০০ মণ টমেটো কিনেছি। এগুলো পৃথক পৃথক স্থানে রেখে স্প্রে করে পাকানো হচ্ছে। সব পেকে গেলে ঢাকায় নিয়ে পাইকারিতে বিক্রি করা হবে।

তিনি জানান, ১০০ টাকার দুই বোতল স্প্রে ২০ বস্তায় ব্যবহার করা হয়। ২০ বস্তায় থাকে প্রায় ২৫ মণ। অর্থাৎ ২০০ টাকার স্প্রে ব্যবহার করে অতিরিক্ত মুনাফা হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। কাঁচার চেয়ে পাকা টমেটোর দাম মণপ্রতি ২০০ টাকা বেশি।

গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুল জাহিদ বলেন, অনুমোদিত কীটনাশকই ব্যবহার করা উচিত নয়। এই অবস্থায় টমেটো পাকানো হচ্ছে রাসায়নিক দিয়ে। এতে টমেটোর ভিটামিন ও স্বাদ দুটোই নষ্ট হয়, যা খেলে কিডনি নষ্ট, পেটের সমস্যা, লিভারে সমস্যা, ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ হতে পারে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মরিয়ম আহমেদ বলেন, সব ধরনের মেডিসিনের বোতলে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে ফল পাকানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তবু কেউ টমেটো পাকানোর জন্য সেটি ব্যবহার করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow