গৃহবধূর নিষ্ঠুরতার শিকার ক্ষুধার্ত দুটি কুকুর ছানা
খাবার সংগ্রহের জন্য বাসাবাড়িতে উৎপাত করার অপরাধে দু'টি কুকুর ছানাকে পিটিয়ে মৃত ভেবে নর্দমায় ফেলে দেয়ার পর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে তাদের। এরমধ্যে উদ্ধার হওয়ার পরেও বাঁচতে পারেনি একটি ছানা। অপরটি গত দু'দিন যাবত মৃত্যুর সাথে লড়াই করে এখনো টিকে রয়েছে। তবে বিনা চিকিৎসায় রাস্তার ধারে ধুকছে সেটি।
মানুষের হাতে কুকুর ছানাদের উপর এহেন অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণের ঘটনাটি শহরের পূর্ব খাবাসপুরের ঢাকাইয়া পট্টি এলাকার। ওই এলাকার একজন গৃহবধূ কুকুরের বাচ্চা দু'টির উপর এই নৃশংসতা চালান বলে অভিযোগ। এরপর বাড়ির কাজের মেয়েকে তাদের ফেলে দেয়ার জন্য পাঠান। এরপর গত সোমবার রাতে ড্রেনের মধ্যে ওই কুকুরের ছানা দু'টি ফেলে রেখে যায় মেয়েটি।
জিয়াউল হাসান নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, সোমবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ড্রেনের মধ্যে ওই দুটি কুকুরের একটির গোঙানির আওয়াজ শুনে কয়েকটি শিশু তাদের ড্রেন থেকে তুলে পাশের ফুটপাতের ময়লার পাশে তুলে রাখে। শীতের রাতের তীব্রতা সহ্য করেও একটি কুকুর ছানা ঘটনার পর ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। যদিও প্রচন্ড নির্যাতনের শিকার হয়ে শরীর নাড়াতে পারছে না এখনো। একইস্থানে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা কুকুরটি হঠাৎ মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার কথা যেনো জানান দিচ্ছে।
দেখা যায়, দু'একজন সহানুভূতিশীল মানুষ তার জন্য পাশে খাবার রেখে দিয়েছে। আর তার পাশেই গত তিনদিনযাবত মৃত অবস্থায় পড়ে আছে অপর কুকুর ছানাটি।
পরিবেশবাদীদের মতে, প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা এক ধরনের মানসিক বিকৃতি বা অসুস্থতা। ফরিদপুর ডায়বেটিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টুডেন্ট আহমেদ সৌরভ বলেন, একটা মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করলে তার যে কষ্ট হয়, অন্য প্রাণীরও তাই হয়। দেশে নৃশংসভাবে প্রাণী হত্যার হার ব্যাপকভাবে বাড়ছে, বাড়ছে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা।
ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহমদ আলী বলেন, প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ অনুযায়ী প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আর এই অপরাধে দায়ী ব্যক্তি বা সংঘটনে সহায়তা করলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কোনো প্রাণীকে হত্যা এই অপরাধের শামিল।
পশুপাখি সংরক্ষণে ১৯২০ সালের পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা নিরোধ আইন বাতিল করে প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ পাশ করা হয়। তবে এখনো বেওয়ারিশ বা মালিকানাবিহীন পশুপাখিদের রক্ষায় এই ‘প্রাণী কল্যাণ আইন’ যথার্থ নয়। আইনে অনেক ফাঁক রয়েছে। এছাড়া আইনটি কার্যকর করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাড়া মিলেনা। উপরের ঘটনাটি যার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদপুর পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইদ্রিস খান বলেন, ঘটনাটি আমার চোখে পড়েনি। তবে অবলা প্রাণীর সাথে এমন নিষ্ঠুর আচরণ কাম্য নয়। আর পৌরসভার ড্রেনেও মৃত প্রাণী ফেলা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।
What's Your Reaction?