চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলরুটে যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা, দক্ষতার অভাব 

মো: সিরাজুল মনির,চট্রগ্রাম ব্যুরো
Apr 27, 2024 - 13:56
 0  6
চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলরুটে যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা, দক্ষতার অভাব 

কন্ট্রোল রুমের ভুল সিগন্যালের কারণে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল রুটে যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করে যাচ্ছে যাত্রী সাধারণ। মূলত অদক্ষ জনবল দিয়ে কন্ট্রোল রুম পরিচালিত করার জন্য বারবার একই ভুল হচ্ছে।

গতকাল ২৬ এপ্রিল একই সময়ে পটিয়া স্টেশনে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস এবং কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ক্রসিং করে। এর ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল। এ সময় বাধ্য হয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেসকে উল্টো পথে দোহাজারী ফিরিয়ে নিয়ে যায়। পর্যটক এক্সপ্রেসকে কক্সবাজার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তারপর কক্সবাজার এক্সপ্রেস দোহাজারী থেকে ছেড়ে যায়। জানা গেছে, পাহাড়তলী কন্ট্রোল এবং পটিয়া স্টেশন মাস্টারের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

পাহাড়তলী কন্ট্রোল, ট্রাফিক বিভাগ, স্টেশন মাস্টার এবং পয়েন্টম্যানের বারবার ভুলের কারণে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইনে এরই মধ্যে অনেকগুলো ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। বারবার একই ভুলের কারণে এই রুটে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই রুটের ট্রেন চালকরা (লোকোমাস্টার)।

জানা যায়, পাহাড়তলী কন্ট্রোলের ভুলের কারণে গতকাল দুপুরে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটি পটিয়া স্টেশন আসার পর আবার উল্টো পথে (পুশব্যাক) ২৪ কিলোমিটার দোহাজারী স্টেশনে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ এর আগে পটিয়া স্টেশনের মেইন লাইনে ক্রসিং করে কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস। এই ট্রেনটিতে রেলওয়ের অর্ধডজন শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। এই ব্যাপারে দোহাজারী স্টেশন ম্যানেজার এস এম ইকবাল জানান, গতকাল দুপুরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজারগামী (৮১৬) পর্যটক এক্সপ্রেস এবং কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী (৮১৩) কক্সবাজার এক্সপ্রেসের ক্রসিং পটিয়া স্টেশনে করার সিদ্ধান্ত নেয়–কন্ট্রোল। সেই মোতাবেক পর্যটক এক্সপ্রেস আগে পটিয়া স্টেশনের মেইন লাইনে এসে দাঁড়ায়, অপরদিকে ৮১৩ কক্সবাজার এক্সপ্রেস পটিয়ার কাছাকাছি আসে। কিন্তু পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ পটিয়া স্টেশনের লুপ লাইনে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের (২২ কোচের) রেক জায়গা হবে না। পটিয়া স্টেশন থেকে ষোলশহর পর্যন্ত ৮ বগির বেশি বগির ট্রেন ক্রসিং করা যায় না। পরবর্তীতে কক্সবাজার এক্সপ্রেসকে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে পটিয়া থেকে ব্যাক গিয়ারে (উল্টো পথে) করে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে আবার দোহাজারী স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। এ সময় পর্যটক এক্সপ্রেসে করে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় কর্মাশিয়াল ম্যানেজার, বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার–১, বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার–২সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

দুই ট্রেনের চালকরা জানান, কন্ট্রোল থেকে কোনো ট্রেনের মুভমেন্ট–ক্রসিং যারা করে থাকেন তারা অবশ্যই সেই স্টেশন, ট্রেন বিভিন্ন বিষয়ে অবগত থাকেন। আজকের (গতকাল) মুভমেন্ট যিনি করিয়েছেন তিনি কি জানতেন না যে, পটিয়া স্টেশনে এই পুরো ট্রেন জায়গা হবে না? পটিয়া স্টেশনের আউটারেই একটি ডেড স্টপেজ (ভাঙা সেতু) আছে, সেই সেতুর উপর দিয়ে উল্টো গাড়ি চালানো রীতিমতো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত। অথচ সেটাই জোর করে করা হয়েছে শেষ পর্যন্ত।

এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও লোকোমাস্টার মো. মজিবুর রহমান  বলেন, পাহাড়তলী কন্ট্রোলে ওই সময় যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি একেবারেই অনভিজ্ঞ। স্টেশন সম্পর্কে তার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। কন্ট্রোলে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের সব স্টেশনের মেইন লাইন এবং লুপ লাইন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। তার এই অনভিজ্ঞতার কারণে আজকে পটিয়া স্টেশনে দুইদিক থেকে আসা দুটি কক্সবাজার এক্সপ্রেস এবং পর্যটক এক্সপ্রেসের মধ্যে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। তার এই উদাসিনতার কারণে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারতো। পাশাপাশি দুটি ট্রেনের বিলম্ব হয়েছে কয়েক ঘণ্টা। যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কক্সবাজার থেকে ২২ বগি নিয়ে পটিয়া আসা কক্সবাজার এক্সপ্রেসকে আবার পুশব্যাক (২৪ কি.মি. উল্টো পথে) করে দোহাজারী স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ট্রেন উল্টো পথে চলার সময় ইঞ্জিন পেছন থেকে কাজ করে (সোজা ভাষায় বলতে গেলে ব্যাক গিয়ার), ট্রেনের পেছনের অংশ সামনে থাকে আর ইঞ্জিন থাকে তখন পেছনে।

উল্টো পথে ট্রেন চালানো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে রেলওয়ে রানিং স্টাফ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লোকোমাস্টার মো. মজিবুর রহমান বলেন, এটা আইনে কভার করে না। জোর করে ব্যাক গিয়ারে ২২টি বগি আবার দোহাজারী নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা উচিত ছিল চট্টগ্রাম থেকে ইঞ্জিন গিয়ে সামনে লাগিয়ে তারপর নিয়ে যাওয়া।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কন্ট্রোলে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের অবহেলা এবং স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টম্যানের ভুলের কারণে কক্সবাজার রেল লাইনে বারবার এই ধরনের ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

গত ২৪ তারিখ স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টম্যানের ভুলে লাইন ক্লিয়ারেন্সের কারণে কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ডুলহাজারা স্টেশনে লাইনচ্যুত হয়। একই দিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনকে ষোলশহর স্টেশনে এবং দোহাজারী পিডিবির তেলবাহী ট্রেনটিকে পটিয়া স্টেশনে ভুল লাইন ক্লিয়ার দেয়া হয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow