চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত, শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাপ্তাই চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করে রাখার কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জানা যায় বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী গতকাল প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন চুয়েট শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসেন। শান্ত সাহা পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (২০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী (আইডি–২০০১১০০)। তিনি নরসিংদীর কাজল সাহার ছেলে। অন্যদিকে তৌফিক হোসেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (২১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী (আইডি–২১০১০০৬)। তিনি নোয়াখালী সুধারামের নিউ কলেজ রোড এলাকার মোহাম্মদ দেলোয়ারের ছেলে। অন্যদিকে গুরুতর আহত পুরকৌশল বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র (২১তম ব্যাচ) জাকারিয়া হিমু চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এদিন দুপুরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ৩ শিক্ষার্থী। রাঙ্গুনিয়ায় ঘুরা শেষে তারা চুয়েটের দিকে ফিরে আসছিলেন। কাপ্তাই সড়কের শাহ আমানত বাস সার্ভিসের একটি বাস বহদ্দারহাট থেকে রাঙ্গুনিয়ার দিকে যাচ্ছিল। সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় বেপরোয়া বাসটির সাথে চুয়েট শিক্ষার্থীদের মোটর বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় ঘটনাস্থলে মারা যান শান্ত সাহা এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান তৌফিক হোসেন।
এদিকে চুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকাল ৫টার পর থেকে সড়কে অবস্থান নেন চুয়েটের অন্তত চার সহস্রাধিক বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী। তারা প্রথমে বাস আটকালেও সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহি গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলতে দেননি। এ সময় শাহ আমানত লাইনের তিনটি বাস আটক করেন তারা। বিক্ষুব্ধ অবস্থানের এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে চুয়েটের ভেতর আটক করে রাখা তিনটি বাসের একটি বাস নিজেরা চালিয়ে বের করে আনেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে এনে গাড়িটি প্রথমে ভাংচুর চালান, এরপর আগুন লাগিয়ে দেন। আগুন লাগার পর গাড়িটি সড়কের ডান পাশের ওয়াকওয়ের র্যালিং গিয়ে ধাক্কা খেলে র্যালিংয়ের বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। ঘটনাস্থলে থাকা রাউজান থানার ওসি জাহেদ হোসেন জানান, সোয়া নয়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তাদের চুয়েট এলাকা হেঁটে পার হয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
কয়েকজন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, কাপ্তাই সড়কে বেপরোয়াভাবেই চলাচল করে এই বাসগুলো। তাদের কারণে এর আগেও চুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এই সড়কে ঘাতক বাস চলতে দেয়া হবে না।
চুয়েটের উপ–পরিচালক (জনসংযোগ) ফজলুর রহমান জানান, শান্ত সাহার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং তৌফিকের লাশ এভারকেয়ার হসপিটালে রয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর অকালপ্রয়াণে চুয়েট পরিবার মর্মাহত। সর্বশক্তিমান তাদের আত্মা শান্তিতে রাখুক। চুয়েট পরিবার এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে এবং নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।’ বিক্ষোভ চলাকালে চুয়েটের ছাত্র কল্যাণ সংস্থার উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। বাসটি আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে চুয়েট শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেয়। পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে। রাত সাড়ে ৯টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
What's Your Reaction?