চট্টগ্রাম বেড়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম
ঈদুল আযহার এখনো দুই মাস বাকি কিন্তু এর আগেই পেঁয়াজ নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি দশ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে পেঁয়াজের দাম। একইসাথে কোনো কারণ ছাড়াই বেড়ে যাচ্ছে আলুর দাম। ঈদের ছুটির কথা বলে বাড়ানো হচ্ছে দাম। বলা হচ্ছে, ছুটিতে সরবরাহ কম হওয়ায় বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। আলুর দাম কেজি প্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। খুচরো বাজারে আলু পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। গতকাল ১ কেজি আলু ৫৫ টাকা এবং ১ কেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, কোনো সিন্ডিকেটকেই বাজার পরিস্থিতি নিয়ে যা ইচ্ছে করার সযোগ দেয়া হবে না। অবশ্যই এদের দমন করা হবে।
কোরবানিতে পেঁয়াজের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এই বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে প্রায় প্রতি বছরই পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ে। সংঘবদ্ধ চক্র পেঁয়াজের বাজার নিয়ে কারসাজি করে। কিন্তু কোরবানির এখনো প্রায় দুই মাস বাকি থাকলেও পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়তে শুরু করেছে, বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। গত সপ্তাহেও ৬০ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। গতকাল পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। রাতারাতি পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে যাওয়াকে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে মন্তব্য করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবের উদ্ধৃতি দিয়ে তারা বলেন, দেশে প্রতিবছর ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। দেশি উৎপাদনের পাশাপাশি প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। মাসে গড়ে দুই লাখ টনের মতো পেঁয়াজ লাগলেও কোরবানির মাসে তা তিন লাখ টনের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে। আর এই বাড়তি চাহিদাকে সিন্ডিকেট পুঁজি করে মানুষের পকেট কাটে। দেশে উৎপাদিত এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রচুর মজুদ থাকলেও ঈদের ছুটিতে সরবরাহ কমে যাওয়ার আজগুবি তথ্য দিয়ে সিন্ডিকেট বাজার নিয়ে খেলা করছে।
আলুর বাজার নিয়েও মেতেছে সিন্ডিকেট। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও রাতারাতি কেজি প্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে এবং দোকানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। গেলো সপ্তাহে যা ৫০ টাকা ছিল। আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার জন্যও দোহাই দেয়া হয়েছে ঈদের ছুটিতে সরবরাহ কমে যাওয়া। দেশে উৎপাদিত আলু দিয়েই দেশের চাহিদা মিটে। আলু টুকটাক রপ্তানিও হয়। দেশীয় এই সবজি আমদানি করতে না হলেও নানা অজুহাতে দর বাড়ানো হয়।
সরকারি সূত্র মতে, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৭৫–৮০ লাখ টন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, দেশে উৎপাদিত আলুর প্রায় ২৫ শতাংশ বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৩১ হাজার টন।
বাড়তি উৎপাদন এবং মজুদ থাকলেও সিন্ডিকেট থেমে নেই বলে মন্তব্য করে ক্যাবের একজন নেতা বলেছেন, মনিটরিংয়ের অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ে খেলা করছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে তিনি দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ক্রেতাদের অভিযোগ বাজারে কোন কিছুর কমতি নেই তারপরেও সরবরাহ কমের কথা বলে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিটা পণ্যের উপরে বাড়তি দাম নিচ্ছে।
What's Your Reaction?