চট্টগ্রামে বে টার্মিনালের পুরোটাই হবে বিদেশি বিনিয়োগে-বন্দর চেয়ারম্যান
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেছেন, বে–টার্মিনালের পুরোটাই হবে বিদেশি বিনিয়োগে। এখানে সব মিলিয়ে নয় থেকে দশ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে ১৩৭তম বন্দর দিবস উপলক্ষে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এসব তথ্য তিনি।
বন্দর চেয়ারম্যান আরো বলেন, বে–টার্মিনাল আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প। প্ল্যানিং হচ্ছে। আমরা ভূমি পেয়ে গেছি। মাস্টারপ্ল্যান হয়ে গেছে। সবচেয়ে গভীর চ্যানেল হবে এখানে। ১২–১৪ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল। সব নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সুখবর হচ্ছে এখানে তিনটি টার্মিনাল হওয়ার কথা ছিল। এখন চারটি টার্মিনাল হবে। মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করবে। আর টার্মিনাল ১ পরিচালনা করবে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং টার্মিনাল ২ পরিচালনা করবে দুবাইভিত্তিকে প্রতিষ্ঠান ডিপি। দেড় বিলিয়ন করে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে দুইটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে তারা। একটি লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল করবে দেশি প্রতিষ্ঠান। সেখানে হাফ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে। বন্দরের মাল্টিপারপাস টার্মিনালে এক বিলিয়ন ডলার বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে। সে চুক্তিও আমরা করব। রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, গত বছর আমাদের জন্য সাফল্যজনক ছিল। চমৎকার একটি চুক্তির মাধ্যমে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে (পিসিটি)তে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছি। এতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে আর বৈদেশিক আয় বাড়বে। পিসিটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সেখানে বিদেশিদের পাশাপাশি এদেশ থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের এখন প্রশিক্ষণ চলছে। এছাড়া পিসিটিতে এক দেড় বছরের মধ্যে সব ইকুইপমেন্ট চলে আসবে। ইতোমধ্যেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে সারাবিশ্বে। এটা দেশের জন্য অন্যতম সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বন্দর চেয়ারম্যান আরো বলেন, মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরে তিন–চার বছরের মধ্যে নিজস্ব টার্মিনাল হবে। সাপোর্ট ভ্যাসেল সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যাতে টার্মিনাল একদিনও বন্ধ না থাকে। মাতারবাড়িতে দ্বিতীয় ধাপে ৭০০ একর জমি অধিগ্রহণের জরিপ কাজ চলছে।
কর্ণফুলী নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে চট্টগ্রাম বন্দর কি কি পরিকল্পনা করছে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কর্ণফুলী চট্টগ্রাম বন্দরের হার্ট। এ নদী আমাদের মায়ের মতো। নদী খনন, বর্জ্য অপসারণ নিয়মিত করে যাচ্ছি। নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। বর্জ্য ঠেকাতে বন্দরের পক্ষ থেকে খালের মুখে নেট বসিয়ে দেওয়া হবে। তবে এককভাবে কারও পক্ষে নদী রক্ষা সম্ভব নয়। বন্দরের অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। ১৯৮৬ সালে নির্ধারিত ট্যারিফে বন্দর চলছে। এখন জ্বালানির দাম বেড়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের ট্যারিফ কম। আমরা প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। এটা জরুরি।
এমভি আবদুল্লাহ নিরাপদে মুক্ত হওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি নিরাপদে মুক্ত হওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের আন্তরিকতা, বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় এটা সম্ভব হয়েছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের বন্দরের পর্ষদ সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান, সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) হাবিবুর রহমান, সদস্য (অর্থ) শহীদুল আলম ও সচিব ওমর ফারুক।
What's Your Reaction?