চট্রগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলার ১১৫ তম আসর আজ

মো: সিরাজুল মনির,চট্রগ্রাম ব্যুরো
Apr 25, 2024 - 12:37
 0  4
চট্রগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলার ১১৫ তম আসর আজ

চট্টগ্রাম মহানগরীর লালদীঘি এবং আশ পাশের এলাকায় এখন যেন পা ফেলার জায়গা নেই। নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে বেপারীরা। এই সময়টার জন্যই যে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা যেন তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে তেমনি নগরবাসীও ক্ষণ গণনা করতে থাকে। কারণ এই সময়টায় যে জব্বারের বলী খেলাকে কেন্দ্র করে বৈশাখী মেলার আসর বসে। তবে এই মেলার চাইতে ১২ বৈশাখ এবং ২৫ এপ্রিল তারিখটি বেশি প্রত্যাশার চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষের কাছে। কারণ বছর ঘুরে এই দিনটিতেই বসে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বার স্মৃতি বলী খেলা। অন্যান্যবারের মতো এবারেও আজ বসতে যাচ্ছে এই জব্বারের বলী খেলার ১১৫ তম আসর।

ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে আছে মঞ্চ। যে মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই করবে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বলীরা। সেই ১৯০৯ সালে বদরপাতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তরুণদের শামিল করতে এই বলী খেলার আয়োজন করেছিলেন। কে জানতো সেদিনের সেই বলী খেলা আজ শতবর্ষী মহীরুহ হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। পরিণত হবে দেশের শতবর্ষী ঐতিহ্যে। সময় যতই গড়াচ্ছে, দেশ যতই আধুনিকতার ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ হচ্ছে ততই যেন এই জব্বারের বলী খেলার আবেদন দিন দিন বাড়ছে। দেশে শতবর্ষী তেমন কোন ঐতিহ্য এখন আর নেই। একে একে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরুর লড়াই কিংবা বলী খেলা। সেখানে দিনকে দিন যেন তারুণ্যে প্রবেশ করছে জব্বারের বলী খেলা।

ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান নানা কারণে স্মরণীয়। যার মধ্যে অন্যতম এই জব্বারের বলী খেলা একটি। ব্যবসায়ীরা যেমন সারা বছর এই জব্বারের বলী খেলার বৈশাখী মেলার জন্য অপেক্ষা করে তেমনি সারা দেশের বলীরা এই ১২ বৈশাখ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে অধীর আগ্রহে। এই দিনটিতে নিজেকে সেরা প্রমাণের জন্য বছর ব্যাপী প্রস্তুত করতে থাকে বলীরা। কত জনইতো এই জব্বারের বলী খেলা থেকে হিরো বনে গেছেন। কত অখ্যাত বলী এসে ছুঁ মেরে নিয়ে গেছে শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি। কত হিরো পরিণত হয়েছে জিরোতে। আবার কত অখ্যাত বলী এসে পৌঁছে গেছে খ্যাতির চূড়ায়। কতজন স্বপ্ন পূরণের আনন্দ নিয়ে ছেড়ে গেছে লালদীঘি ময়দান। আবার কত স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে লালদীঘির সবুজ চত্ত্বরে। কেউ কেউ আবার হাল ছাড়েনি। লড়াই করে গেছে বছরের পর বছর। শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন। আবার কেউ কেউ প্রথম এসেই বাজিমাত করেছেন।

আজ আবার এসেছে সেই দিন। আবারো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার বলীরা আসতে শুরু করেছে। জব্বারের বলী খেলার আবেদন এখনো যে এতটুকু কমেনি তা বুঝা যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বলীদের ছুটে আসাতে। ইট পাথরের এই নগরী অন্তত ১২ বৈশাখ একদিন যেন রূপ নেয় গ্রাম বাংলায়। গতকাল থেকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বলীরা আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শাহজালাল বলী, রানার আপ চকরিয়ার তারিকুল ইসনলাম জীবন বলী সহ সেরা সব বলীরা নিশ্চিত করেছে তাদের উপস্থিতি। সে সাথে নতুন, পুরাতন মিলে শতাধিক বলী এবারের জব্বারের বলী খেলায় অংশ নেওয়ার আশা করছেন আয়োজকরা। গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া। আজ বিকেল চারটায় শুরু হবে ঐতিহাসিক সেই লড়াই।

এবারের বলী খেলার পৃষ্টপোষকতা করছে এনইচটি স্পোর্টস কমপ্লেঙ। তাদের সৌজন্যে এবারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন পাবে ট্রফি সহ নগদ ৩০ হাজার টাকা। যা এ যাবতকালে সর্বোচ্চ। রানার আপ পাবে ট্রফি সহ নগদ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া তৃতীয় স্থান অর্জনকারী পাবে ট্রফি সহ নগদ ১০ হাজার টাকা। আর চতুর্থ স্থান অর্জনকারীও পাবে ট্রফি সহ নগদ ৫ হাজার টাকা। এছাড়াও এবারের বলী খেলা প্রথম রাউন্ডে বিজয়ীরা পাবে ট্রফি সহ নগদ দুই হাজার টাকা। এবারের জব্বারের বলী খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রেল পথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এম পি। উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এবারের বলী খেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেঙ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow