চার বছর ধরে চিকিৎসক নেই,খুঁড়ে খুঁড়ে চলছে থানচির প্রাণী সম্পদ কার্যালয়
বান্দরবানের থানচি উপজেলার জনবলসংকটে ধুঁকছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। কর্মকর্তা নেই দির্ঘ ৪ বছর অর্ধেকেরও বেশি পদ শূন্য থাকার কাংঙ্খিত সেবা বঞ্চিত হচ্ছে গৃহপালিত পশু পালন কারীরা। ভ্যাকসিম ও ঔষধ পাওয়া গেলে ও হত দরিদ্র গৃহপালিত পশু পালনকারীরা ক্রয় ক্ষমতা না থাকায় কার্যালয়ের ফ্রিজে মেয়াদ উর্ত্তিন্ন হয়ে নস্ট হয়ে যাচ্ছে ভ্যাসিমের টিকা।
অচলাবস্থা নিরসনে দফায় দফায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
উপজেলা ৪ টি ইউনিয়নের ২১৮ টি গ্রামে প্রায় দুই লাখেরও বেশী গরু,ছাগল,ভেঁরা, শুকর,হাঁস- মুরগী, পালন করছে। উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাধ্যমে সেগুলো দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের। উপজেলা দপ্তরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ১ জন, সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ১ জন, উপ- সহকারী প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ২ জন,ব্যাটেনারী মাঠ কর্মকর্তা ২ জন, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট ১ জন, উচ্চমান সহকারী ১ জন,ক্যাশিয়ার ১ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক ১ জন, কৃত্রিম প্রজ্জনম ১ জন, ড্রেসার ১ জন,নিরাপত্তা প্রহরীসহ ১১ জনের পদ থাকলেও বর্তমানে কাগজে-কলমে রয়েছেন ৪ জন। ফলে হযবরল অবস্থায় খুঁড়ে খুঁড়ে চলতে হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে জানা গেছে, কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ, পুনর্বাসন ও উপকরণ সহায়তা, প্রশিক্ষণ, পশুপাখিকে টিকাদান, চিকিৎসা সেবাদান, মাঠ পরিদর্শন, উন্নত প্রযুক্তি খামারিদের মধ্যে বিতরণ, পশুপাখির চিকিৎসা প্রদান, উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ, খামার নিবন্ধন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় জরুরি সেবাদানের কাজগুলো এই দপ্তরের অধীনে পরিচালিত হয়।
দপ্তরটিতে কর্মরতরা বলছেন, মূল চিকিৎসক কর্মকর্তা ২ জন ৪ বছর ধরে নেই। তার দায়িত্ব পালন করছেন জেলা কার্যালয়ে কর্মকর্তা ডা: জুলহাস আহম্মেদকে অতিরিক্ত হিসেবে। তিনি কোন সময় আসেন না। বছরের পর বছর ধরে উচ্চমান সহকারী, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ড্রেসার,কৃতিম প্রজ্জনম, নিরাপত্তা প্রহরীসহ মোট ৭ টি পদ শূন্য। ফলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মূল পরিচালক / চিকিৎসক (কর্মকর্তা) না থাকায় অবশিষ্ঠ কর্মকর্তারা যেতে পারছেন না মাঠপর্যায়ে। এতে কার্যালয়ের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার পশু পালনকারীরা। সেবা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে জনবল নিয়োগের জন্য দপ্তরটি সর্বশেষ গত ২৬ জুন মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে কাগজের কলমে ৪ জন থাকলেও মোট ২ জনের সাথে দেখা হয়। ব্যাটেরিনারী ফিল্ড এ্যাসিস্টেন মেনসিং ম্রো ও কীর্তিমান চাকমা অপর ২ জন অনুপস্থিত জানতে চাইলে তারা ২ জন বলেন, প্রাণি সম্পদ কার্যালয় ও হাসপাতাল উপজেলা পরিষদে নিচ তলা ছোট একটি কক্ষে বরাদ্ধ দিয়েছে প্রশাসন কিন্তু আমাদের দরকার একটি হাসপাতাল তৈরীর জন্য বড় কক্ষ এবং অফিসের জন্য ও বড় কক্ষ কিন্তু চিপাচিপি মধ্যে ভ্যাকসিন রাখা ফ্রিজ, ঔষধ রাখা আলমিরা টেবিল চেয়ার রাখার জায়গা ও নেই। অনেক কষ্টের বিনিময়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কর্মকর্তা ( চিকিৎসক) থাকলে আমাদের নিজস্ব কোন ভবনের উপর অফিস কার্যক্রম ও হাসপাতাল হয়ে যেত। একটি সরকারী কার্যালয়ের পিতৃমাতৃহীণ আমরা কাজ করতেছি। তারা জানান,এখানে গরু- ছাগল,হাঁস- মুরগি খামারীরা অথবা সাধারণ গৃহপালিত পশু-পাখি বিভিন্ন রোগের আক্রান্ত হলে কেউ ফিরে তাকায় না।
দেখা হয়, হেডম্যান পাড়ার স্বপন মারমা নামে এক খামারী সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ হাসপাতালে অনেক সমস্যা লোকজন নেই, তার ওপর ওষুধপাতিও নেই। এখান থেকে ভালো চিকিৎসা আশা করা যায় না। তাও বাধ্য হয়ে এখানেই আসি। এক সপ্তাহ আগে এখানে চিকিৎসা করাতে এসে প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকায় আমার খামারে প্রায় শতাধিক মুরগি মারা গেছে।
থানচি বাজারে ব্যবসায়ী অর্ধশতাধিক গরু,ছাগল ও ভেরার পালণ করেন মো: জসিম উদ্দিন নামে এক খামারী, তিনি বলেন, ‘এখানে জনবলসংকটের কারণে অনেক সময় ধরে বসে আছি। খামার নিবন্ধন করব আর একটা প্রত্যয়ন নেব। কিন্তু তাও অনেক বছর কেটে গেল কিছু করার সম্ভব হয় নি।
তিন্দু গ্রোপিং পাড়া ক্রানিংঅং মারমা বলেন, ‘আমার ১ টি গরু ও একটি শুকরের অসুস্থতা কারনে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ নিতে এসেছি। অনেক সময় অপেক্ষার পর আমাকে চিকিৎসাপত্র দিয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বলেছে।’
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি সভাপতি খামলাই ম্রো বলেন, ‘থানচি উপজেলার গৃহপালিত প্রাণি চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে অথচ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দপ্তরই লোকবলের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এতে আমাদের খামারিরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ ও লোকবল নিয়োগের জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অ:দা: ) ও বান্দরবান জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: জুলহাস আহম্মেদ বলেন, থানচি উপজেলা লোকবল নিয়োগের জেলা পরিষদ ও পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের সুপারিশ মাধ্যমে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রতি ৩ মাস পর পর চাহিদা পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু চারটি বছর পেরিয়ে গেল তাও জনবল পৌষ্ঠিং দিচ্ছে না। আমি শুধু মাত্র কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি স্বাক্ষর করি, এ ছাড়া থানচি উপজেলার কোন দাযিত্বে নেই।
What's Your Reaction?