জুয়ার কবলে খাগড়াছড়ি

কেফায়েত উল্লাহ,খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি
Jan 8, 2025 - 20:28
 0  22
জুয়ার কবলে খাগড়াছড়ি

জুয়া ও অশ্লীল গান-বাজনার কবলে পড়ে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের সমাজ জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সর্বত্র। সম্প্রীতি বিজয় মেলার নামে অশ্লীল গান-বাজনা, বেপরোয়া হাউজি, লটারী ও বিভিন্ন অবৈধ খেলার নামে গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল ও অসচেতন সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে নিত্যদিন প্রায় এক মাস ধরে। জেলার স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে এবং  দি ফোর স্টার র‍্যাফেল ড্র ও দি আশার প্রদীপ র‍্যাফেল ড্র নামের মেলা পরিচালনাকারী দুটি প্রতিষ্ঠাননের বিরুদ্ধে উঠেছে এ অভিযোগ। 

সচেতন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেন, গেল মাসের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বিজয় দিবসের আনন্দ উদযাপন উপলক্ষে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে শুরু হওয়া সম্প্রীতির বিজয় মেলা শিরোনামে সর্বনাশা এ মেলা প্রায় মাসখানেক ধরে চলে। শোনা যাচ্ছে খাগড়াছড়ির বিজয় মেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মানিকছড়ি  উপজেলায় এরকম সর্বনাশা আরেকটি মেলা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি জেলার বৃহত্তম উপজেলা মাটিরাঙ্গায়ও একটি দুষ্ট চক্র মেলা আয়োজনের তোড়জোড় শুরু করেছে বলে জানা গেছে। 


সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান বিজয় দিবসের আনন্দ উদযাপন করা হচ্ছে অশ্লীল গান-বাজনা, জুয়া খেলা, হাউজি খেলা, লটারিসহ বিভিন্ন নামের অবৈধ, নোংরা, অসুস্থ ও বিকৃত রুচির যত্তসব অশ্লীল খেলা-ধুলা ও  কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের এভাবে স্মরণ করা খুবই দু:খজনক। এটাকে জঘন্য বিকৃত রুচির পরিচায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করে তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমরা মহান শহীদদের এভাবে স্মরণ করছি কেন  ?  বিজয়ের আনন্দ এভাবে উদযাপন করছি কেন ?  এই বিকৃত রুচির উদযাপন প্রক্রিয়া আমরা কিভাবে পেলাম ?  এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতি ছাড়া আর কিছু নয়। তারা বলেন, যাদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে, যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা পেলাম, মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা, আত্মার প্রশান্তির জন্য কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব এবং প্রতিটি লোকের নৈতিক দায়িত্ব। অথচ সেটা না করে অশ্লীল গান-বাজনা ও জুয়া খেলার মতো সর্বনাশা ও সমাজ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তাদের স্মরণ করছি। এইসব অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাতির  শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের বিদেহী আত্মা শান্তি পাচ্ছে নাকি কষ্ট পাচ্ছে বলে প্রশ্ন করেন তারা।

মাটিরাঙ্গা উপজেলায় মেলা আয়োজনের তোড়জোড় শুরু হওয়ায় স্থানীয় সচেতন মহল ও আলেম সমাজ এ ধরনের বিজয় মেলা কিংবা আনন্দ মেলা প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। তারা ইতোমধ্যে এ ধরনের কোন মেলার অনুমতি না দেয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। মাটিরাঙ্গা উপজেলার স্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধি মাওলানা আক্তারুজ্জামান ফারুকী জানান, অত্র উপজেলায় এ ধরনের মেলা আয়োজনের যে কোন অপচেষ্টা মুসলিম তৌহিদি জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করবে। স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি আব্দুর রহিম জানান, প্রশাসন যদি এ ধরনের মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয় কিংবা কোন পক্ষ যদি স্থানীয় মুসলিম তৌহিদি জনতার অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়ে এ ধরনের মেলার আয়োজন করার অপচেষ্টা করে তাহলে তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা হবে। 


সাধারণ মানুষের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার বাজারে বিনোদনের নামে সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার হাতিয়ার এই মাসব্যাপী 'সম্প্রীতি বিজয় মেলা' গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। বিশেষ করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সহজ-সরল নারী-পুরুষরা এ ধরনের মেলার কর্মকাণ্ডে খুব বেশি মাত্রায় জড়িয়ে যাচ্ছেন। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর গ্রামগুলোকে টার্গেট করে বিশেষ প্রচারণা চালায় মেলার আয়োজকেরা।  লটারির বাহারি পুরস্কারের লোভে ও হাউজি খেলার নগদ অর্থের আকর্ষণে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সহজ-সরল  নারী-পুরুষরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে এ ধরনের মেলায়। 

সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, যেখানে নিদারুণ অর্থকষ্টের দিন অতিবাহিত করছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরা, সেখানে  সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এ ধরনের মেলার আয়োজন সমাজ ও অর্থনীতি ধ্বংসের জঘন্য হাতিয়ার ছাড়া আর কিছু হতে পারেনা। তারা এ ধরনের অসুস্থ-অশ্লীল ও সমাজবিধ্বংসী মেলার আয়োজন থেকে বিরত থাকার জন্য এবং চলমান শান্তি-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলের প্রতি আহবান জানান। 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow