ডেপুটেশনের কবলে মাটিরাঙ্গা হাসপাতাল : নেপথ্যে সিভিল সার্জন নিজেই
হাজেরা বেগম (৪৫) হাসপাতালে ভর্তি হন বুকের ব্যথা নিয়ে। গেলো ২৮ ডিসেম্বর সকালে ভর্তি হন হাসপাতালে আর ৩১ডিসেম্বর সকালে ডাক্তার ওয়ার্ডে রাউন্ডে এসে তাকে রিলিজ করে দেন। রোগী এবং তার সাথের লোকেরা ডাক্তারকে বলেন : স্যার, রোগীতো মারাত্মক অসুস্থ, সে কাতরাচ্ছে, তাকে রিলিজ দিচ্ছেন কেন ? ডাক্তার জবাব দেয়, ডাক্তার কি আপনি নাকি আমি। বাড়িতে নিয়ে যান, ঔষধ যেগুলো লিখে দিয়েছি সেগুলো খাওয়ান, ঠিক হয়ে যাবে। নিরূপায় হয়ে তারা রোগী নিয়ে চলে যাওয়ার সময় রোগীর শারিরীক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে তারা পুনরায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফিরে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগীকে আবার হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। রোগী নিয়ে ওয়ার্ডে গেলে কর্মরত নার্স পাপিয়া সুলতানা শিউলি চিকিৎসকের ভর্তি সংক্রান্ত ব্যবস্থাপত্র ক্ষুব্ধ হয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ওই নার্স বলতে থাকেন, যত্ত সব পাগল! এক পাগলে রিলিজ দেয় আরেক পাগলে ভর্তি করাতে বলে। এ অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হয়ে তারা ভয়ে চিকিৎসা না করিয়ে রোগী বাড়িতে নিয়ে যায়।
বাইল্যাছড়ি রাবার বাগান এলাকার বাসিন্দা দিন মজুর ইন্দ্র ত্রিপুরার স্ত্রী চন্দনা ত্রিপুরা (২৪)। পেটে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এসময় নার্স নুনুপ্রু চৌধুরী তাকে দেখে কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়াই বলেন তার পেটের বাচ্চা মারা গেছে। এম আর করাতে হবে। না হয় রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য তিনি দশ হাজার টাকা দাবী করেন। টাকা দিতে না পারলে কোন সেবা দেয়া যাবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন। এসব শুনে রোগীর আত্মীয়স্বজনরা এম আর করাতে সাত হাজার টাকায় দফারফা করেন। এক পর্যায়ে চাপ প্রয়োগ করে আরো দেড় হাজার টাকাসহ মোট সাড়ে আট হাজার টাকা নেন নার্স নুনুং প্রু চৌধুরী।
ছোট্ট বেবি তকি বিন ওমর ২৯ ডিসেম্বর সকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পুরো দিন বেবিটা বারান্দায় ছিলো তীব্র ঠান্ডার মধ্যে। সকালে একবার ছাড়া পুরো দিন ডাক্তারের দেখা নেই। নার্স যতটুকু চিকিৎসা দিয়েছে তাতেই তকির অভিভাবকদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিৎসায় বিরক্ত হয়ে রোগী নিয়ে বাড়িতে চলে যান বাবা হাফেজ ওমর ফারুক।
খাগড়াছড়ি জেলার সবচাইতে জনবহুল উপজেলা হলেও মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আজও চলছে দশ শয্যার কাঠামোয়। আশেপাশের সব কয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এ হাসপাতালটি দশ শয্যার রয়ে গেছে সাবেক ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার খায়রুল আলম ও বর্তমান সিভিল সার্জনের অনীহার দরুন। হাসপাতাল ফটকের সাইনবোর্ডে ৩১ শয্যার হাসপাতাল কথাগুলো সাজিয়ে রাখা হলেও বাস্তবে নেই ৩১ টি শয্যা। কাঠের ভাঙ্গা-চুরা টেবিলকে বেড বানিয়ে পথে- ঘাটে, বারান্দায় আর রুম মিলে পাওয়া যায় ২৬ টি বেড।
বিভিন্ন সময়ে এ হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা যায়,ডিউটিতে কোন ডাক্তার নেই। শোনা যায়, উনি নাকি কোয়ার্টারে আছেন নাহয় কোন দোকানের পেছনের রুমে আড্ডা দিচ্ছেন। প্রয়োজন হলে নাকি আসবেন। রোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায় একদিন সকাল বেলা ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে যাওয়ার পর পুরো দিনে এবং রাতে ডাক্তার আর আসেনা। পরদিন সকাল বেলায় ডাক্তার আবার রাউন্ডে আসেন। প্রায় সময় এমনটিই ঘটে থাকে এখানে। সন্ধ্যায় রোগীরা রিলিজ পায়না ডাক্তার না থাকার কারণে। নার্সরা বলে দেয়, এখন চলে যান ; কাল সকালে এসে রিলিজ নিয়ে যাবেন।
হাসপাতালের অফিস সূত্রে জানা যায়, ১০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জনবল নেই একদিকে ; অপরদিকে যে জনবল আছে তা থেকে বেশিরভাগ ডাক্তার ও স্টাফ ডেপুটেশনে নিয়ে দীর্ঘদিন অন্যত্র নিযুক্ত রেখেছেন সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের। সিভিল সার্জন পরিকল্পিতভাবে অত্র হাসপাতালের ডাক্তার নার্সসহ সহায়ক স্টাফদের জেলাসদরসহ নিজের বাসায় এবং অন্যত্র ডেপুটেশনে নিযুক্ত করে রেখেছেন। ডাক্তার আর নার্সের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে অত্র হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা। পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকার দরুন হাসপাতালের অভ্যন্তরভাগ প্রায়শই নোংরা ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে যায়। এমএলএসএস বা পিয়ন না থাকার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের চাপে নাকাল হওয়ার ঘটনা নিত্যদিনের। হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমরা নিজেরাই অফিস রুম ঝাড়ু দিতে হয় এবং পুরো দিনে এক কাপ চা খাওয়ানোর জন্য সেবাকর্মীও আমাদের নেই। হাসপাতালের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, দশ শয্যার হাসপাতালটিতে ডাক্তার থাকার কথা ১৮ জন, কিন্তু আছে ১৩ জন। সূত্র জানায় ১৩ জনের মধ্যে আবার ৭ জনই ডেপুটেশনে সদর হাসপাতালসহ অন্যত্র কাজ করছেন। ডাক্তার ওমর ফারুক, নিউচিং চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, রাকিব উদ্দিন, ইমতিয়াজ চৌধুরী, ফাহাদ বিন জামাল এবং জাহেদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ ডাক্তাররা অত্র হাসপাতালে পোস্টিং সত্ত্বেও তারা ডেপুটেশনের নামে অন্যত্র কাজ করছেন বলে কথিত আছে। সদর হাসপাতালে ৫ জন এবং রামগড় হাসপাতালে ২ জন ডেপুটেশনে আছেন বলে জানা যায়। উনাদের কেউ কেউ আবার মাটিরাঙ্গায় প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে থাকেন।
অত্র হাসপাতালে নেট কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন ডাক্তার। ৬ জনের মধ্যে প্রায়শই কেউ ছুটিতে থাকেন, কেউ ট্রেনিংয়ে থাকেন আবার কেউ থাকেন কোথায় তা কেউ জানেন না। কথিত আছে, একটি দোকানের পেছনে ডাক্তারদের আড্ডাখানা খোলা হয়েছে। হাসপাতালে ডিউটি রেখে ডাক্তাররা সেই দোকানের পেছনে বসেই আড্ডা দিয়ে থাকেন। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে সেই আড্ডাখানা ছেড়ে তারা হাসপাতালে আসেন না। তাছাড়া একজন ডাক্তার সপ্তাহে ৩ দিনের বেশি ডিউটি করেন না। আবার ৩ দিনের ডিউটির বেশিরভাগ সময় কাটে সেই আড্ডাখানায়। তখন হাসপাতাল উঠ-বস করে বদমেজাজী ঘুষখোর নার্স পাপিয়া সুলতানা শিউলি এবং নুনুং প্রু চৌধুরীর কথামতো।
হাসপাতালের প্রশাসনসূত্রে জানা যায়, অত্র হাসপাতালে ২৪ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৭ জন। তন্মধ্যে দু'জন আছেন ডেপুটেশনে ; ১ জন আছেন ঢাকায়, তার নাম মহিউদ্দিন জমাদ্দার। আরেকজন আছেন খাগড়াছড়ি সদরে,তার নাম পাইনেছা মারমা। নার্স নুনুং প্রু চৌধুরী চাকুরির শুরু থেকেই আছেন এখানে। নুনুং প্রু চৌধুরী এবং পাপিয়া সুলতানা শিউলির আতঙ্কে এখন সাধারণ রোগীরা আর হাসপাতালমুখী হয়না। শিউলি'র স্বামী অত্র হাসপাতালের ব্রাদার মহিউদ্দিন জমাদ্দার অনেক বছর ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে গাজীপুরে ডেপুটেশনে আছেন। শুধুমাত্র হিল ভাতার লোভে সে অত্র হাসপাতাল থেকে বেতন উত্তোলন করে থাকে বলে জানা যায়। মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নারি কেলেংকারির অভিযোগ ওঠে। নুনুং প্রু চৌধুরী রোগীদের সাথে দরাদরি করে চিকিৎসা করে থাকেন। সরকারি হাসপাতালের রোগী ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় দুই হাজার থেকে বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা করার অবৈধ কার্যক্রম অব্যাহত রেখে চলছেন বছরের পর বছর ধরে। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের খেসারত হিসেবে সাবেক মেয়র শামসুল হক স্থানীয় বিচারে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করেন নুনুং প্রু চৌধুরীকে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা এবং জেলা পরিষদের কর্তাব্যক্তিদের সাথে আত্মীয়তার সুবাদে কাউকে পাত্তাই দেননা নার্স নুনুং প্রু চৌধুরী।
মিডওয়াইফ থাকার কথা ৮ জন, আছেন মাত্র ২ জন। ক্লিনার থাকার কথা ৭ জন, আছেন মাত্র ৩ জন ; তন্মধ্যে দু'জনই আছেন ডেপুটেশনে ; ১ জন আছে সিভিল সার্জনের অফিসে, তার নাম দীপায়ন ত্রিপুরা আরেকজন আছেন সিভিল সার্জনের বাসায়, তার নাম সেলিনা বেগম। ওয়ার্ডবয় থাকার কথা ৪ জন, আছেন ৩ জন ; তন্মধ্যে ১ জন সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে আছেন। ফার্মাসিস্ট থাকার কথা ৬ জন, আছেন মাত্র ২ জন। এমএলএসএস থাকার কথা ১১ জন, আছেন মাত্র ২ জন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেখানে ১০ শয্যার হাসপাতালের জনবল নেই সেখানে চলছে ৩১ শয্যার হাসপাতাল তার উপর ডেপুটেশন গিলে খাচ্ছে আমাদের।
এ কয়টি ঘটনাই শুধু নয়, এ রকম শত শত ঘটনার নীরব স্বাক্ষী হয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে ইট-কাঠের হাসপাতাল খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জনবহুল উপজেলা মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল । পথ না চেনা এবং বলতে না পারা হাজারো নিগৃহীত রোগীর নীরব ক্ষোভ ও আর্তনাদের ভারে নিমজ্জমান এ হাসপাতাল দাঁড়িয়ে আছে খোলস পরে। ডাক্তার এবং নার্সদের হিংস্র থাবায় রোগীদের নাকাল হওয়ার ঘটনা এ হাসপাতালের নিত্যদিনের ঘটনা। রোগীদের হেস্তনেস্ত করা এ হাসপাতালের ডাক্তার নার্সদের রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে প্রায় দুই যুগ ধরে। ভুক্তভোগীদের স্বজনরা এবং সচেতন নাগরিকরা জানান, ডাক্তার নার্সদের এ ধরনের কু-কর্মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ছাবের নিজেই।
দশ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও তিন যুগ পরেও এ হাসপাতাল রয়ে গেছে সেই তিমিরেই। নেই দশ শয্যার হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই এখানে। আছে গুটিকয়েক হিংস্র ডাক্তার নার্স আর তাদের গডফাদার সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ছাবেরের ছালে দেখা যায়, হাসপাতালের ওয়ার্ড, বারান্দা, ড্রেন এবং বাথরুম প্রায়শই অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা অবস্থায় থাকে। দায়িত্বরত ক্লিনার জানায়, আমি একজন মাত্র। আমি নার্সের সাথেও থাকি আবার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও করি৷ আমার একার পক্ষে অত্তকাজ করা সম্ভব হয়না। আমিওতো মানুষ।
সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী ত্রিপনময় ত্রিপুরা বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা ঢাকা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কে অবস্থিত হওয়ায় অত্র হাসপাতালে সব সময় রোগীর চাপ থাকে। অত্র উপজেলার সাধারণ মানুষ এবং আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পতিত আহত রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা এ হাসপাতালের। কিন্তু কই, কোন সেবা পাচ্ছে বলেতো শুনতে পাইনা। সব সময় ডাক্তার নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগই শুনতে পাই। ডাক্তার পাওয়া যায়না, রোগীদের না দেখে খাগড়াছড়ি কিংবা চট্টগ্রাম রেফার করে দেয়, নার্সরা রোগীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, টাকা ছাড়া চিকিৎসা দেয়না, অপরিচ্ছন্ন বাথরুম, নোংরা পরিবেশ ইত্যাদি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। ওইদিকে এখন আর যাইনা।
মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার বাসিন্দা নূরুল আবছার ভূঁইয়া বলেন, এই হাসপাতাল নিজেই রোগাক্রান্ত। তিনি প্রশ্ন করেন, এ হাসপাতালে কোন সেবা পাওয়া যায় ? তিনি বলেন, সাধারণ জনগণ এবং দরিদ্র শ্রেণির লোকেরা হাসপাতালে যায়। তারা গিয়ে দেখে ডাক্তার নেই। নার্স দুই-একটা থাকলেও তাদের ব্যবহারে রোগীরা হাসপাতালে থাকতে চায়না। টাকা ছাড়া নার্সরা সেবা দেয়না। রোগীদের প্রেস্ক্রিপশন এদিক সেদিক ছুঁড়ে ফেলে দেয়। নার্সরা ডাক্তারদের কথা শুনেনা, রোগীর কথা শুনবে কেন ?
পরিবেশকর্মী এ এইচ রাশেদ বলেন, এখানকার ডাক্তারদের মধ্যে বিন্দুমাত্র দায়িত্ববোধ এবং মানবিকতাবোধ নেই। দরিদ্র লোকজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যায়। ডাক্তার রোগীদের চোখ দিয়ে একবারের জন্যও দেখেনা। খাগড়াছড়ি পাঠিয়ে দেয় নাহয় চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়। অসহায় গরীব রোগীরা চট্টগ্রাম কিংবা খাগড়াছড়ি গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেনা। ফলে রোগ নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে অসহায় দরিদ্র রোগীরা।
পৌর নাগরিক পরিষদের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ জালাল বলেন, এ হাসপাতাল জনমানুষের কোন কাজে আসেনি। এখানে সবাই যার যার আখের গোছানোয় ব্যস্ত। সিভিল সার্জন থেকে ডাক্তার-নার্স সবাই যার যার ফায়দা হাসিলে মত্ত হয়ে পড়েছে। ডাক্তার নার্সদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা, রোগীদের সাথে অসদাচরণ ও হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ নিয়ে দফায় দফায় সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে। তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। তিনি কোন কিছু শুনতে পেয়েছেন বলে মনে হচ্ছেনা। গণমাধ্যমে কয়েক দফায় হাসপাতালের বেহাল দশা নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমাদের আহাজারি কেউ শুনতে পেয়েছে বলে মনে হয়না। সিভিল সার্জন নিজেই এ হাসপাতালের সাথে বৈরি আচরণ করছেন। এটা তার কাজেকর্মে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ডাক্তার নার্সদের জবাবদিহিতার আওতায় এনেছেন বলে প্রমাণিত হচ্ছেনা। ডেপুটেশনের হাতিয়ার ব্যবহার করে অত্র উপজেলার জনমানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি থেকে কয়েক বছর ধরে বঞ্চিত করে আসছেন সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ছাবের। তিনি অত্র হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে নিয়ে গেছেন নিজের অফিসের জন্য। অত্র হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী সেলিনা বেগমকে নিয়ে গেছেন তার বাসার জন্য। এখন আমরা মূলত সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ছাবেরের জুলুমের কবল থেকে মুক্তি চাই। এই সিভিল সার্জন হাসপাতালের টোটাল চিকিৎসা সেবাকে গিলে ফেলেছেন। এখন তার কবল থেকে এ হাসপাতাল উদ্ধার করাটাই আমাদের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। তার কারণে এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার খায়রুল আলমের যোগসাজশে এ হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত হতে পারেনি। খায়রুল আলম গেছে কিন্তু সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের থেকে গেছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর ডাক্তার মোহাম্মদ ছাবেরকে অবিলম্বে এখান থেকে বদলি করতে হবে এবং তার লুটপাটের তদন্ত করতে হবে।
অত্র হাসপাতালের নিগ্রহের শিকার রোগী হাজেরা, চন্দনা ত্রিপুরা এবং তকি বিন ওমরের বাবা হাফেজ ওমর ফারুক জানান, নার্স নুনু প্রু চৌধুরী এবং শিউলি টাকা ছাড়া চিকিৎসা দেয়না। রোগীর সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে। তাদের মেজাজ সবসময় গরম হয়ে থাকে। রোগীতো পরের কথা, তারাতো ডাক্তারদেরই পাত্তা দেয়না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবাগত কর্মকর্তা ডাক্তার গোলাম মোস্তফা নাদিম জানান, অত্র হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট চলছে এটা সত্য। যারা বিভিন্ন জায়গায় ডেপুটেশনে আছেন খুব শীঘ্রই তাদের ফিরিয়ে আনার লক্ষে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আমরা লিখবো। নার্সদের সাথে আমি কথা বলেছি। তারা আমার কাছে ওয়াদা করেছেন, আগেকার কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আর ঘটবেনা।
What's Your Reaction?