থানচিতে চিকিৎসক সংকটের মধ্যে বাড়ছে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার চিকিৎসক সংকটের মধ্যেও হঠাৎ ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স'র দুই চিকিৎসকের মধ্যে একজন ট্রেনিং-এ থাকায় রিতিমতো চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এ সময়ের পর্যাপ্ত পরিমান চিকিৎসক পোষ্ঠিং দেয়ার দাবী করেছেন এলাকাবাসী।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স'র সূত্রে জানা যায়,গত জুন মাস থেকে অদ্যাবধি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৪ জন ম্যালেরিয়া রোগীকে ভর্তি করে সুস্থ করা হয়েছে। এ সময়ে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক কর্মীরা পাড়া পাড়ায় চিকিৎসা দিয়েছে ২২২ জন ম্যালেরিয়া রোগীকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে সেবা দিতে না পেরে ইতিমধ্যে ৩ জনকে বান্দরবান জেলা ও একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
প্রতি বছর বর্ষাকালের শুরুতে জুন-অক্টোবর এই ৫ মাস বান্দরবানের থানচির দুর্গম এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী দেখা দেয়। নানা প্রতিকূলতায় রোগীরা পাচ্ছেন না জরুরি চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ। দুর্গম এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ না হওয়ায় ও মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই এলাকাগুলো। তবে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রোগী স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ভর্তি করা হয়েছেন।
চিকিৎসকদের মতে বর্ষায় মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে পারে এ আশংঙ্খা ছিল । এদিকে থানচি উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের মোট ২৭৭ টি গ্রামের মধ্যে ৬৬ টি গ্রামকে ম্যালেরিয়া
চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য বিভাগ ম্যালেরিয়া জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।।
রবিবার (১৪ জুলাাই) সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স'র পুরুষ ও নারী দুইটি ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগী মেধ্যে ও ম্যালেরিয়া রোগী ৯ জন দেখা মিলছে। চিকিৎসাধীন অবস্থা সিনিয়র নার্স লালসাংপার বম বলেন,পাহাড়ে বেশীর ভাগ মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে সাধারণ ভাইরাস জ্বর ভেবে অনেকে বাড়ীতে (দেবতা ধরছে মনে করে) প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে দেবতাদের মোরগ,ছাগল,গরু খাওয়ানো হয়। সাথে বাজার থেকে পেরাসিট্যামল ট্যাবলেট ঔষধ সেবন করে অনেক দিন রেখে দেয়। রোগীর অবস্থা আশংঙ্খা জনক খুবই দুর্বল হওযার পর উপরন্ত না পেয়ে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন। আমরা দুর্বল রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে অনেকে হাসপাতার স্থানান্তর ও করতে হয়েছে। তবে এ বছরে কোন রোগীকে চিকিৎসা অভাবে মরতে হয় নি।যারা হাসপাতালের ভর্তি হয়েছে তাদের সুস্থ করে তোলার আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব। আবাসিক চিকিৎসক ( আরএমও) ডা: মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ২০২৩ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়াও আবাসিক চিকিৎসক ডা: মেহনাজ ফাতেমা তুলি ও আমি দুইজন, চলতি মাসের ডা: তুলিকে ট্রেনিংগে নিয়ে গেচ্ছে আমি একজনকে ২৪ ঘন্টা ডিউটি দিতে হয়। কি করে সম্ভব প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উর্ধত্বম কর্তৃপক্ষ ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। আগামি আক্টোবর মাস পর্যন্ত বোধ হয় একা সামলাইতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ জানান, আমি বর্তমানে চট্টগ্রামে ট্রেনি-এ আছি, এক সপ্তাহ সময় লাগবে। গত জুন হতে উপজেলা গ্রামে গ্রামে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আবাসিক চিকিৎসক মাত্র দুইজন তার মধ্যে একজন ট্রেনিং এ। চিকিৎসক সংকটের কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানিয়ে দেয়ার পর ও আমাদের পৌষ্টিং দিচ্ছে না। চিকিৎসক সমস্যা কারনে কোন একজন ম্যালেরিয়া রোগী যদি মারা যায় তাহলে আমরা দায়ি থাকবো না। আমি রাসেলস ভাইপার সাপে কামরের ভ্যাকসিন টিকা পর্যাপ্ত পরিমান চাহিদা পত্র উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠালেও এখন ও ভ্যাকসিন টিকা দিচ্ছে না। আমাদের কর্মীরা পাহাড়ে পায়ে হেঁটে চিকিৎসা দিতে গেলে সাপের কামর দিতে পারে, পাহাড়ে প্রচুর পরিমান সাপ রয়েছে জরুরীভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োজন। এ ছাড়াও বান্দরবান জেলা হাসপাতালে আমাদের একজন চিকিৎসক প্রেষণে রয়েছে, তাকে পু:নরায় পাঠানোর জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি।
যোগাযোগ করা হলে বান্দরবানের সিভিল সার্জেন্ট ডা: মো: মাহাবুবুর রহমান বলেন, থানচি উপজেলার চিকিৎসক সংকটের কথা জেলার আইন শৃংঙ্খলার সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। থানচি থেকে প্রেষণে একজন চিকিৎসক রয়েছে তিনি বদলি হয়ে গেছে। প্রেষণে অপর একজন আছে সেটি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জেলা সদরে প্রেষণে থাকলে শীঘ্রই থানচি উপজেলা পাঠানো হবে। সাপের কামরে ভ্যাকসিন ও শ্রীঘ্রই পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য: ২০২৩ সালে ১১ জুলাই থানচিতে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক সংকটের কারনে ৩ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছিল।
What's Your Reaction?