ধলিয়ার জলে ফুল ভাসিয়ে ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসবের সূচনা

মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ, জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়িঃ
Apr 14, 2025 - 01:41
 0  2
ধলিয়ার জলে ফুল ভাসিয়ে ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসবের সূচনা

ধলিয়া খালের জলে ফুল ভাসিয়ে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় শুরু হয়েছে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী নববর্ষ উৎসব—বৈসু। রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে গঙ্গা মায়ের আশীর্বাদ কামনায় ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিনদিনব্যাপী এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের উদ্যোগে ধলিয়া খালের তপ্ত মাস্টার এলাকায় সকাল ৮টায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য প্রফেসর (অব.) প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিষদের সাবেক সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু মনীন্দ্র কিশোর ত্রিপুরা।

সংগঠনের সভাপতি কীর্তি ভূষণ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাবু ললিত কুমার ত্রিপুরা, তপ্ত বিকাশ ত্রিপুরা, সুনি ত্রিপুরা, বীর মোহন ত্রিপুরা, হারভি ত্রিপুরা, বরন বিকাশ ত্রিপুরা, মনো বিকাশ ত্রিপুরা, ডলি ত্রিপুরা ও দ্বিজেন ত্রিপুরাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা বলেন, “আমাদের অনাগত দিনগুলো যেন শান্তি ও সমৃদ্ধিতে কাটে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ যেন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এই আয়োজন পারস্পরিক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ।” তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথি বাবু মনীন্দ্র কিশোর ত্রিপুরা বলেন, “ফুল পবিত্রতার প্রতীক। আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক—পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের পবিত্রতা ও ঐক্য রক্ষা করা।”

সভাপতির বক্তব্যে কীর্তি ভূষণ ত্রিপুরা বলেন, “‘বৈসাবি’ উৎসবে যেমন সবাই মিলেমিশে অংশ নেয়, তেমনি বৈসু আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গর্ব। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থী ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে অংশ নেন। পুরোহিত মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে গঙ্গা মায়ের উদ্দেশে প্রার্থনা পরিচালনা করেন।

উল্লেখ্য, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসু’ চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন এবং বৈশাখ মাসের প্রথম দিন পালন করা হয়। তিনদিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিন ‘হারি বৈসু’, দ্বিতীয় দিন ‘বৈসুমা’ এবং তৃতীয় দিন ‘বিসিকতাল’ নামে পরিচিত। উৎসবে মূলত আগামী দিনের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow