নবীনগরে প্রথমবারের মত বিটরুট আবাদ

কাউসার আহমদ,নবীনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
Jan 22, 2025 - 22:13
 0  4
নবীনগরে প্রথমবারের মত বিটরুট আবাদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় বীরগাঁও ইউনিয়নের কেদারখোলা প্রথমবারের মতো বিটরুট আবাদ হয়েছে। যা ইতিমধ্যে উপজেলা জুড়ে সারা ফেলেছে। বিটরুট নামের গাঢ় গোলাপি বা লালচে রঙের সবজিটি এখনও আমাদের দেশে খুব পরিচিত না। কয়েক বছর ধরে শীতকালে বিছিন্নভাবে সারাদেশে এ সবজির উৎপাদন হচ্ছে। বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন এ সবজিটিকে সুপারফুডও বলা হয়ে থাকে।
নিজের জমিতে নিত্য নতুন বা বিদেশি ফল ও সবজি উৎপাদন করে দেশের মানুষের মধ্যে পরিচিত করানোর শখ তার দীর্ঘদিনের। সেই আগ্রহ থেকেই বিদেশি সবজি বিটরুট চাষ করেছেন জাকির হোসেন।

কৃষক জাকির হোসেন জানান, আমি নতুন ফসল আবাদে সবসময়ই কৌতূহল জাগে। আমার ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার জনাব নির্মল ভৌমকের পরামর্শ এবং উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বিটরুট আবাদে পরিকল্পনা গ্রহণ করি। ইতিমধ্যে ফসল পরিপক্ক হতে শুরু করেছে। ৩-৪ টি বিটরুটে এক কেজি হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কেদারখোলা, নজরদৌলত, বাইশমৌজা বাজারে বিক্রি করেছি, স্থানীয় পর্যায়ে বেশ উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।
পার্শ্ববর্তী গ্রামের কৃষক লিটন মিয়া জানান, বীরগাঁও ইউনিয়নে নতুন এই ফসলটি দেখতে এসেছি। টিভিতে এর অনেক গুণাগুণ শুনেছি। আজ সরেজমিনে দেখলাম। আমাদের দেশে এই ফসল দারুণ সম্ভবনাময়।
উপসহকারী কৃষি অফিসার জনাব নির্মল ভৌমিক জানান, ফ্রীপ প্রকল্পের অর্থায়নে এই প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হয়েছে। সকল ধরনের সার, বীজ উপকরণ দেওয়া হয়েছে। বিটরুটে রোগ বালাই অনেক কম হয়, ৮০-৯০ দিনের মধ্যেই ফসল উত্তোলন সম্ভব, বাজার দর ও ভালো। স্বল্প সময়ে লাভজনক ফসল।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, বিটরুট ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ইত্যাদি উপাদান আছে এতে। এতে আরও রয়েছে প্রচুর ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ৮০ থেকে ৮৫ দিনে বিটরুট বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে বিটরুটের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, কৃষিবিদ সুশান্ত সাহা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক ফসল সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোজিত হচ্ছে। বিটরুট আমাদের জন্য দারুণ সংযোজন।
বিটরুট কাঁচা এবং রান্না করে দুভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা খাওয়া হলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। বিটরুটের জুস, এবং সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির সঙ্গে যোগ করে রান্না করে খেতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বিটরুট অনেক উপকারী। এতে রয়েছে নাইট্রেটস, যা রক্তনালী প্রসারিত করে ও রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজম ক্ষমতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রতিরোধ করে। বিটে আছে টালাইন নামক প্রদাহ বিরোধী যৌগ, যা প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগকে নিয়ন্ত্রণ করে।
এটি অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। বিটরুটে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিট মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য বিট কার্যকরী সবজি। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটরুটের জুস খেলে শরীরের টক্সিন দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে বিটের জুস তা কমাতে সাহায্য করে।
বীজ বপনের পর থেকে এ জাতের সবজি বিক্রি উপযুক্ত হওয়ায় বেশ কয়েক ধাপে তা বাজারে বিক্রি করা হয়। বিটরুট সাধারণত মাটির নিচের সবজি। অনেকটা গাজর কিংবা মুলার মতো করে চাষাবাদ করা হয়। তাই সবজিটি তোলার উপযুক্ত হলেই তা মাটি থেকে গাছসহ উপড়ে ফেলা হয়। বিটরুটের ভেতর ও বাইরের রং গাঢ় লাল হয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow