নাসিরনগরে দুই মাসে ৩১ ট্রান্সফরমার চুরি, বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এবার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চোর আতঙ্কে রাত কাটছে উপজেলাবাসীর। গত দুই মাস (নভেম্বর ও ডিসেম্ভরে) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে বোরো জমির সেচ কাজে ব্যবহৃত ২২ টি, ২ টি শিল্প ও ৭ টি আবাসিক গ্রাহকের ট্রান্সফরমার। এতে বোরো চাষ ব্যহত হয়ে কৃষি উৎপাদন বিঘ্ন হবে বলে স্থানীয় কৃষকদের দাবী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসিরনগরে শীত আসার সাথে সাথে চুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শুষ্ক মৌসুমের মতই শীতেও নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে। তাই রাতে যখনই লোডশেডিং শুরু হয় তখনই উপজেলার কোন না কোন এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরি হয়। তাদের ধারণা এসবের সাথে স্থানীয় পল্লীবিদ্যুতের প্রশিক্ষিত ইলেকট্রেশিয়ানরা জড়িত থাকতে পারে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নিয়োগকৃত কোন ইলেকট্রেশিয়ান এসবে জড়িত না। চুরি ঠেকাতে বার বার উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় কথা বলেছি। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি বাদী হয়ে মামলাও করেছে। তার পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমন কি গত এক বছরে প্রায় একশোর মতো ট্রান্সফরমার চুরি হলেও এসব ঘটনায় কেউ আটক হয়নি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাতমন্ডল গ্রামের উবায়দুল হক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের গ্রামে গত ৭ জানুয়ারী রাতে সেচ প্রকল্পের চারটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তারা বলেন নিজেদের খরচে ট্রান্সফরমার লাগাতে হবে। এদিকে বোরোর সেচ মৌসুম চলে যাচ্ছে। তাই কৃষকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
একই গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে আমাদের সেচ কাজ বন্ধ। জমিতে হালচাষ করে রাখছি কিন্তু পানির কারণে বোরো আবাদ করতে পারেতেছিনা। ট্র্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় জমি নিয়া বেকায়দায় পড়ছি।
নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের দুই মাসে ৩১ টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে ৯ টি, পূর্বভাগ ইউনিয়নের ৩ টি, বুড়িশ্বর ইউনিয়নে ৬ টি, গোকর্ণ ইউনিয়নে ৮ টি, কুন্ডা ইউনিয়নে ২ টি ও চাপরতলা ৫ টি। এছাড়াও চলতি মাসের প্রথম এক সপ্তাহে ৮ টিসহ এ উপজেলায় গত এক বছরে ৯০ টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে।
এদিকে বুড়িশ্বর ইউনিয়নে চলতি মাসের ৯ তারিখ পল্লীবিদ্যুতের দুইজন লাইনম্যানকে বেঁধে তিনটি সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার নিয়ে যায়। এতে ওই এলাকার কয়েকশ বিঘা জমির আবাদ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ৩ টি ট্রান্সফরমার নতুনভাবে সংযোগ দিতে লাগছে প্রায় আড়াইলাখ টাকা।
বুড়িশ্বর ইউনিয়নের কৃষক গৌর পাল বলেন, সঠিক সময়ে পানি না পেলে আমরা বোরো আবাদ করতে পারবো না। জমিতে ফসল না ফলালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। একই অভিযোগ ওই এলাকার কৃষক গিয়াস উদ্দিন, মিজান শাহা, আলাউদ্দিন ও আলাল শাহার।
উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, নিয়মিতভাবেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। এতে করে কৃষক সঠিক সময়ে জমিতে পানি দিতে না পারায় আবাদ ব্যাহত হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।
নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, প্রায় একশোর কাছাকাছি ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। এসবে স্থানীয় কিছু অসাধুচক্র জড়িত। আমরা নিজেরা বাদী হয়ে মামলা করেছি কিন্তু কেউই আটক হয়নি। তবে এসব রোধে স্থানীয়দেরও পাহাড়ার ব্যবস্থাসহ সর্তক থাকতে হবে।
নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ খাইরুল আলম বলেন, আমাদের কাছে পল্লীবিদ্যুৎ থেকে শুরু করে কোন গ্রাহকই ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে কোন অভিযোগ করেননি। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
What's Your Reaction?