নোয়াখালীর অ্যাক্টিভ গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর দুদকের জালে আবদ্ধ
অ্যাক্টিভ গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই অনুসন্ধান দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকলেও আবার নতুন করে শুরু করছে দুদক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনুসন্ধান এগুতে দিচ্ছেন না। তবে, সম্প্রতি দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীরের অবৈধ সম্পদ ও বিদেশে অর্থপাচারের তথ্য হাতে পেয়েছে। শিগগির তাঁর বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তে নামবে দুদক।
দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ অনুযায়ী, অ্যাক্টিভ গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীরের ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, সাতক্ষীরা ও নোয়াখালীর চাটখিলে চারটি ১০ তলা বাড়ি, চারটি প্লট ও ফ্ল্যাট, ২৮টি দোকান, তার ও স্ত্রীর নামে ৩টি বড় ফ্যাক্টরি এবং বিভিন্ন জায়গা প্রায় ৮০০ একর সম্পত্তি রয়েছে। অথচ জাহাঙ্গীর একসময় জনৈক মন্ত্রীর কারখানায় 'সেলসম্যান’ হিসেবে কাজ করতেন। ওই মন্ত্রীর ফ্যাক্টরির টাকা আত্মসাৎ করে নিজেই শিল্পপতি বনে যান। ঢাকার মিরপুর ও পল্লবীতে নিজেই ফ্যাক্টরি করেন। নিজস্ব লোক দিয়ে নানা ধরনের প্রকল্প নিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের যেকোন কাজে তাকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন দিতে হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রীর নামে যেসব সম্পদ পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে, মিরপুর ৭ নম্বর সেকসনের ৩ নম্বর সড়কের ৪ ও ৬ নং প্লটে দুটি বিলাস বহুল বাড়ি। মিরপুর সেকশন ৬ এর ৯ নম্বর ও ১৬ নম্বর সড়কে ২টি ১০ তলা বাড়িতে ফ্যাক্টরি। মিরপুরের পল্লবীর ৩১/৩২ নম্বরে বাড়ি, মিরপুর দিয়া বাড়ীতে বিপুল পরিমান জমি ও আমিবাজার সাভারে জায়গা। গাজীপুরে স্ত্রীর নামে ফাইজা বটম এন্ড ফ্যাক্টরি রয়েছে। যাতে তিনি ব্যায় করেছেন প্রায় ১১০০ কোটি টাকা। এছাড়াও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি প্লট, মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিংয়ে প্লট, গুলশানে পুলিশ প্লাজায় দোকান ও গুলশান বিভিন্ন মার্কেটে স্ত্রীর নামে দোকান রয়েছে।
জাহাঙ্গীর কবিরের মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগও রয়েছে দুদকের কাছে। তার সৌদি প্রবাসী মামা শ্বশুর নূর মোহাম্মদের মাধ্যমে সৌদি আরবে হোটেল ব্যবসায় শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। নূর মোহাম্মদ একসময় যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ক্যাশিয়ার ছিলেন। মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করেন নূর মোহাম্মদ। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ অর্থ বছরে বিভিন্ন টেন্ডার হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি ৪ বছরের টেন্ডার এক সঙ্গে করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পিআইসি ৩১ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত নিয়েছেন। যাহা স্থানীয় সরকার আইন বহিভূত।
জাহাঙ্গীর কবীর নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার চেয়ারম্যান হয়েও স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতি ছাড়া গত দশ বছর অন্তত ৫০ বার বিদেশ ভ্রমন করেন। যা স্থানীয় সরকারের বিধি বহির্ভূত। মূলত মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে তিনি এতবার বিদেশ সফর করেছেন। তিনি গত মাসে ২ কোটি টাকার টেন্ডার গোপনে তার নিজের লোকের নামে বাগিয়ে নেন। ৩ মাস আগে উপজেলা পরিষদ এর ৫ কোটি টাকার গাছ গোপনে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে টিআর কাবিখা সাধারণ জনগণের নিকট বিতরণ না করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্প কাজ নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডার করান তিনি। কাজ না করেই টাকা বাগবাটোয়ারা করে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। জাহাঙ্গীর তার ছেলে মেয়েদের কানাডা এবং আমেরিকা পাঠিয়ে তাদের মধ্যমে মোটা অংকের অর্থ বিদেশ পাচার করেন বলে দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, এসব অভিযোগ পুরনো। দুদক অনুসন্ধান করছে করুক। জবাব দুদককে দেব। এর বেশি কিছু বলবো না।
What's Your Reaction?