নৌবাহিনীর হেফাজতে হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী
নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শনিবার (১০ আগস্ট) রাত ৩টার দিকে উপজেলার ওছখালীর নিজ বাসভবন থেকে তাকে তুলে আনা হয়। তিনি অসুস্থ থাকায় এ সময় তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসও তার সঙ্গে যান।
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলীর নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া মো. আলীর কাছে হাতিয়ার প্রায় সাত লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে বলেও উল্লেখ করেন। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মোহাম্মদ আলীর গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল করেন।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালে সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হিসেবে নোয়াখালী-৬ হাতিয়া থেকে সংসদে যান মোহাম্মদ আলী। ২০০৯ সালে নৌকার প্রার্থী হয়েও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেসে খেলে নোয়াখালী-৬ হাতিয়া আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫টি ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন।
জানা যায় -১৯৮৬ সাল থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর আলী তার জীবনের পুরোটা সময় সবটুকু সুখ-দুঃখের ভাগ এই দ্বীপাঞ্চলের মানুষের কাছে বিলিয়ে দিয়েছেন। তার কাছে দলের নেতাকর্মীদের চেয়ে সাধারণ মানুষের অগ্রাধিকার বেশি। সাড়ে সাত লাখ মানুষের সবচেয়ে বড় নিরাপদ আশ্রয়স্থল তিনি। ঠিক এরকম শত শত উপমা দিয়েও যার কৃতিত্ব শেষ করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায় - রাত ৩টার দিকে মোহাম্মদ আলীর বাসভবনের সামনে নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এলে তিনি ও তার স্ত্রী সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস হেঁটে গিয়ে তাদের গাড়িতে ওঠেন। এ সময় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক আলী অমিও ছিলেন।
মোহাম্মদ আলীর ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহাবুব মুর্শেদ লিটন বলেন- আমাদের নেতা মোহাম্মদ আলী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছেন। তিনি নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার জন্য বলেছেন। আমরা উনার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছি। মোহাম্মদ আলী সাহেব জনপ্রিয় ব্যক্তি। তাকে দ্বীপের রাজা বলা হয়। কোনো অন্যায় অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। আশা করি আমরা তাকে খুব দ্রুতই হাতিয়ার মানুষের মাঝে ফিরে পাব।
মোহাম্মদ আলীর বড় ছেলে হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক আলী অমি বলেন, বাবা বেশ কয়েকবার নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের ফোন দিয়েছেন। তাদের অভয় দিয়ে বলেছেন আপনি আমাদের বাড়ির সামনে আসেন, আমি আপনাদের সঙ্গে যেতে প্রস্তুত আছি। বাবা যাওয়ার সময় আমার মা আয়েশা ফেরদাউসও সঙ্গে গেছেন। আমাদের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষজন বাবার যাওয়া দেখে কান্নাকাটি করেছেন। আসলে আমার বাবা এই মাটি ও মানুষদের ছেড়ে কখনো যাননি। দেশের মানুষকে তিনি সব সময় আপন করে রেখেছেন। আজ শান্ত হাতিয়ার পেছনে আমার বাবা মায়ের অনেক অবদান রয়েছে।
এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলায় দায়িত্বে থাকা নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. মাহমুদুল আলম বলেন, এই মুহূর্তে আমরা কিছু বলতে পারছি না। তিনি আমাদের হেফাজতে আছেন। আমাদেরকে একটু সময় দিন। আমরা আপনাদের সময় হলে বিস্তারিত জানাব। আপনি চাইলে আমাদের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মুশফিকুর রহমান স্যারের সঙ্গে বিস্তারিত জানতে পারেন।
নৌবাহিনী হাতিয়ার কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মুশফিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হাতিয়া উপজেলার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে আমাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
What's Your Reaction?