পাহাড়ে ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে বৈসাবির শুভ সূচনা

বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে চাকমাদের ফুল বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরাদের বিষু উৎসবের মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের প্রধান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন ‘বৈসাবি’ উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে।
দেশের সমতল অঞ্চলে নববর্ষ এক দিনে পালন করা হলেও পাহাড়ে এই উৎসব শুরু হয় অনেক আগে থেকেই এবং চলে প্রায় আট দিন ধরে। এই সময়টিতে পাহাড়জুড়ে বিরাজ করে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে থানচি উপজেলার বলিপাড়া বাজারসংলগ্ন শঙ্খ নদী এবং আশপাশের খাল ও ছড়ায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বৈসাবির সূচনা করেন চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ। এ আনুষ্ঠানিকতা ‘ফুল বিজু’ নামে পরিচিত।
এর আগে শুক্রবার সকাল থেকে নানা আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, নাচ-গান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষজন।
আয়োজকরা জানান, রবিবার (১৩ এপ্রিল) মারমা সম্প্রদায় এবং সোমবার (১৪ এপ্রিল) ত্রিপুরা ও ম্রো সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে ঐতিহ্যবাহী জলখেলি উৎসবেরও আয়োজন রয়েছে।
এবার থানচি উপজেলার ভরতপাড়া, রায়মোহনপাড়া, কমলাবাগানপাড়া, জ্ঞানলালপাড়া ও ব্রহ্মদত্তপাড়াসহ পাঁচটি গ্রামে স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের উদ্যোগে উৎসবটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করা হচ্ছে।
চাকমা সমাজের বিশ্বাস অনুযায়ী, পুরোনো বছরের গ্লানি, দুঃখ ও পাপ মোচনের জন্য গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানো হয়। এতে পুরাতন বছর বিদায় নেয় এবং নতুন বছর বয়ে আনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। এ উপলক্ষে ভোরবেলা খাল-নদীতে গিয়ে নরনারী প্রার্থনায় অংশ নেন।
তবে বর্তমানে এই আয়োজন শুধু চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; মারমা, ত্রিপুরা ও স্থানীয় বাঙালিসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এতে অংশ নিচ্ছেন উৎসাহ-উদ্দীপনায়।
ফুল ভাসানোর পর তরুণ-তরুণীরা নদীতে স্নান সেরে ফিরে যান ঘরে। বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করে ছোটরা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে, সাজসজ্জা শেষে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি চলে। চাকমা পল্লিগুলোতে চলছে গ্রামীণ খেলাধুলাও। এবারে অনেকেই নিজ নিজ গ্রামে ছাড়াও সম্মিলিতভাবে আয়োজন করেছেন অনুষ্ঠান।
চাকমা যুব নেতা রনিজ চাকমা ও কিরণ জ্যোতি চাকমা জানান, “গত বছর উৎসবটি সীমিত পরিসরে পালিত হলেও এবার বড় পরিসরে আয়োজন করেছি। আগামী বছর উপজেলার প্রতিটি এলাকায় বৈসাবি আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।”
থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন, “পাহাড়ের বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী নববর্ষ, সাংগ্রাই, বিঝু ও বিষু পালিত হচ্ছে। প্রতিটি উৎসব নির্বিঘ্ন রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।”
What's Your Reaction?






