পাহাড়ে বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষে সম্প্রীতির বর্ণিল উৎসব

বৈসু, সাংগ্রাই, বিঝু—মিলে বৈসাবি। তিন পার্বত্য জাতিসত্তার এ নববর্ষ উৎসব এখন পুরো পাহাড়ের ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রতীক। বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত র্যালিপূর্ব সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা।
জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছি ২০৩ পদাতিক ব্রিগেডের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান, এসপিপি, এনডিসি, পিএসসি। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক এ.বি.এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। এছাড়াও সমাবেশে সামরিক ও বেসামরিক বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংহ্লামং চৌধুরীর উপস্থাপনায় সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন নবনিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ।
বক্তব্যে জিরুনা ত্রিপুরা বলেন, “বৈসাবি হচ্ছে পাহাড়ের প্রাণের উৎসব। এটি পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন জোরদার করে। এটি বাঙালি ও পাহাড়িদের মিলনমেলাও বটে।”
সমাবেশ শেষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান র্যালির উদ্বোধন করেন। র্যালিতে ত্রিপুরা, মারমা, চাকমাসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অংশ নেন। তারা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাংস্কৃতিক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করেন।
র্যালি শেষে টাউন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এক বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা ও বাঙালি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে মুখরিত হয় উৎসব প্রাঙ্গণ। আয়োজকেরা জানান, নিজেদের সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা টিকিয়ে রাখতে প্রতিবছর এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই এবং চাকমাদের বিঝু—এই তিন উৎসব মিলে বৈসাবি নামে পরিচিত।
ত্রিপুরাদের বৈসু চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন এবং বৈশাখের প্রথম দিন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী চলে। এ উৎসবে ‘হারি বৈসু’, ‘বৈসুমা’ ও ‘বিসিকতাল’ নামে দিনগুলো পালিত হয়। এই দিনে তারা সুখ-সমৃদ্ধির প্রার্থনায় মাতেন।
মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ উৎসব পালিত হয় এপ্রিলের ১৩ থেকে ১৫ তারিখে। পুরোনো বছর বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করার রীতিতে চলে পানি উৎসবসহ নানা আয়োজন।
চাকমাদের বিঝু পালিত হয় বাংলা বছরের শেষ দিন থেকে শুরু করে তিন দিনব্যাপী। এটি মূলত চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব। পরিবার ও সমাজের মঙ্গল কামনায় চলে এই আয়োজন।
What's Your Reaction?






