প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল বিতরণ:হুনতিছি সামনে শীতের আরও দুইডা ধাক্কা দেবে, ওই শীতে আপনাদের এই কম্বল আমাগো উপকারে আসবেনে।
ফরিদপুরের সদরপুরের মফিজউদ্দিন হাজীরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ বৃদ্ধ আব্দুল খালেক বয়াতী (৬৩) হাতে প্রথম আরো ট্রাস্টের কম্বলটি তুলে দিতেই তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন।
কাপা কাপা কন্ঠে বলেন, বাজানরা, ‘আমরা চইরা মানুষ, বাপ মায়ের কবরও নদী গিল্লা খাইছে। এইবার যে কাল পড়ছে বুঝতে পারিনাই বাঁচবো কিনা। কালাইয়া উঠছি। হুনতিছি সামনে শীতের আরও দুইডা ধাক্কা দেবে। ওই শীতে আপনাদের এই কম্বল আমাগো উপকারে আসবেনে। ওম দেবে।’
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় আড়িয়াল খা নদ বিধৌত চরাঞ্চলে শীতার্ত. দুঃস্ত, অসহায় ১৬০টি পরিবারের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে।
আজ রবিবার বেলা ১১টার দিকে সদরপুর উপজেলার চরনাসিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের দুই নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে তালপট্টি, মফিজউদ্দিনের ডাঙ্গী গ্রামের ১৬০ টি পরিবারের হাতে এ কম্বল তুলে দেয় প্রথম আরো ফরিদপুর বন্ধু সভার সদস্যরা। এদেরই একজন আব্দুল খালেক বয়াতী ।
ফরিদপুর শহর থেকে আনুমানিক ৪০ কিলোমিটার দূরে এবং আনুমনিক চার কিলোমিটার পথ ট্রলারে গিয়ে স্থানীয় মফিজউদ্দিন হাজীরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রঙ্গণে সমবেত দুস্তদের হাতে এ কম্বল তুলে দেওয়া হয়।
প্রথম আরো ট্রাস্টের কম্বল হাতে পেয়ে মফিজউদ্দিন হাজীরকান্দি গ্রামের সালমা বেগম (৬৫) বলেন, কম্বল যা আসে সব নদীর ওইপাড়ের (মূল ভূখণ্ড) মানুষজন পায়। আমাগো কথা কেউ মনে রাহে না। ফিইরাও দেখে না। আপনারা যে আমাগো কথা মনে কইরা নদী পাড়ি দিয়া আমাগো জন্য কম্বল আইনা দিছেন তাইতেই আমরা খুশি। শীতির বাকি দিনগুলা একটু ওমের মধ্যে থাকতে পারবো।
প্রথম আলো ফরিদপুর বন্ধুসভার সদস্যরা যখন দুস্তদের হাতে কম্বলগুলি তুলে দিচ্ছিলেন ওই সময় ওই জায়গায় উপস্থিত ছিলেন মফিজউদ্দিন হাজীরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার মোহাম্মদ আলী।
বন্ধুসভার কর্মকান্ড আগাগোড়া লক্ষ্য করে তিনি তার কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি বলেন, এই উদ্যোগের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।পাশাপাশি এও বলতে চাই সমাজের অন্যযারা শীতবস্ত্র বিতরণ করেন তারা যেন প্রত্যান্ত অঞ্চলের দিকে একটু গুরুত্বটা বেশি দেয়।
ওই শিক্ষক আরও বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা সেই ফরিদপুর থেকে অন্তত ৪০ কিলোমিটার দূরে এই প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এসেছে। তারা চাইলেই আশপাশের মানুষকে দিতে পারত।কিন্তু তারা কম্বলটি প্রকৃত দরিদ্র মানুষকে দিতে দুইদিন এই চরে ঘুরে দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে ঘুরে বেছে বেছে কম্বল দিয়েছে। এ কাজটি অন্যরা যদি পালন করতো তাহলে প্রকৃত গরীব মানুষরা উপকৃত হত।
প্রথম আলো ফরিদপুর বন্ধুসভার সভাপতি মানিক কুন্ডু বলেন, কম্বল বিতরণের আগে বন্ধুসভার দুই বন্ধু এ চর এলাকায় এসে ঘুরে ঘুরে দুস্তদের বাছাই করে কুপন দিয়ে যান। আজ ভোরে ইজিবাইক, ট্রলার নিয়ে দুই ঘন্টার পথ অতিক্রম করে আমরা এ চরএলাকায় এসে কম্বলগুলি বিতরণ করি।
What's Your Reaction?