বান্দরবানের থানচি উপজেলার মিবক্যা মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপ ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ
বান্দরবানের থানচি উপজেলার ৩৬৮ নং মিবক্যা মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা বিরুদ্ধের অসামাজিক কার্যকলাপ,ক্ষমতা অপব্যবহার,অধিবাসীদের বেপরোয়ার আচারণ, একে অপরের সাথে বিবাদ সৃষ্টি, জুম চাষের এরিয়া (জায়গা)জোর পুর্বক সাধারণ অধিবাসীদের আবাদী জায়গা দখল, কয়েকটি গ্রামকে ভেঙ্গে খন্দ খন্দ গ্রাম স্থাপন, সম্প্রদায়িক উষ্কানি,অধিপত্য বিস্তার,পাড়ার প্রধান কারবারী একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ বানিজ্য,সহ হেডম্যানের অপকর্মে উপর সুস্থ তদন্ত, যথাযথ শাস্তি ব্যবস্থা গ্রহন করার এবং হেডম্যানের পদ থেকে অব্যহতি ও প্রতিকার চেয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে ১৩ গ্রামের কারবারী ( পাড়ার প্রধান)ও ১৮ জন ভূক্তভোগী সাধারণ মৌজাবাসী। অভিযোগকারীদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বার ও রয়েছে।
অভিযোগের জানা যায়,অধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বান্দরবানে থানচি উপজেলা ৩৬৮ নং মিবক্যা মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা ক্ষমতার অপব্যবহার, মৌজাবাসীদের বেপরোয়ার আচারঙ, অত্যাচারে,জগড়া বিবাদ সৃষ্টি,শালিশ বিচারের নামে জুম চাষের এরিয়া( জায়গা)নিয়ে গ্রুপিং সৃস্টি, একাধিক ব্যক্তিকে একই জমি বরাদ্ধ, পাড়ার কারবাড়ী নিয়োগের একাধিক ব্যক্তির নিকট অর্থ আদায়সহ নানান অপকর্মে সাথে নিজেই জড়িত থেকে এবং তার অনুসারীদের মাধ্যমে এইসব কর্মকান্ডে করে আসছে গত ১৭ বছর ধরে।
অভিযোগে আর ও বলা হয়েছে, মৌজা হেডম্যান নিযুক্ত হবার পর থেকে মৌজাবাসীগণের উপর বেপোরোয়া ভাবে অন্যায়, অত্যাচার, মোটা অংকে ঘুষ/উৎকোচ গ্রহণ সহ পাড়ায় পাড়ায় গ্রুপিং সৃষ্টি করে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে বিচারে নামে সুবিধা আদায় করা ইত্যাদি অপকর্মে লিপ্ত থাকা মৌজাবাসী অতিষ্ট। একই গ্রামে মোটা অংকে মাধ্যমে বিভিন্ন জনকে কারবারীদের শীল( নিয়োগ) বানিজ্য প্রদান করার অভিযোগ ও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ডিসেম্বর মাসে যথাযথ সুস্থ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল ও ৩৬৮ নং মিবক্যা মৌজা ছাংওডং পাড়া ৫ ম্রো সম্প্রদায় সাথে ১১ মারমা পরিবারের নতুন পাড়ার স্থাপনের ঘরবাড়ীর নির্মানের সংঘর্ষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে থানচি থানাকে চিঠি দিয়েছে। থানচি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো: জসিম উদ্দিন একই থানা উপসহকারী পরিদর্শক এসআই মো: আলমগীর হোসেন কে তদন্তভার নিয়োগ করে সরেজমিনের প্রতিবেদন প্রদানের (আইও) নির্দেশ দেন।
মো: আলমগীর হোসেন জানান, পাহাড় পর্বত থাকায় ঘটনাস্থলে যাওয়ার সম্ভব হয়নি। অভিযোগ কারী ও অভিযুক্তদের আগামি ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নৌটিশ দিয়েছি কিন্তু ঘরবাড়ী নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে জানেন, ছাংওডং পাড়ার বাসিন্দা তর্জ ম্রো (৬০) বলেন, আমরা ম্রো সম্প্রদায় ৫ পরিবারকে আমাদের অংসাথুই হেডম্যানের বড় ভাইয়ের বন্দোবস্তকৃত জায়গা নতুন ঘরবাড়ী নির্মাণ করে নতুন পাড়া স্থাপনের কথা বললে গত ডিসেম্বর মাসে আমরা ৫ পরিবার ঘরবাড়ী নির্মাণ করি। ছাংওডং পাড়া কারবারী (পাড়ার প্রধান) সাউপ্রু মারমা বলেন, ম্রো সম্প্রদায় ৫ পরিবার, মারমা সম্প্রদায়ের ১১ পরিবার নিয়ে আমরা গত ১১ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছি। আমাদের জুম চাষের একই এরিয়া ( জায়গা)সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মাধ্যমে হাতে হাত রেখে সুন্দর ভাবে বাস করে আসছি। কিন্তু হেডম্যন অংসাথুই মারমা আমাদের ছাংওডং পাড়া দুইভাগের বিভক্ত করে সম্প্রদায়িক বিবাদের সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে এ বিবাদ চলতে থাকলে যে কোন মুহুর্থে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ হতে পারে। সে জন্য হস্তক্ষেপ চেয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় নিকট অভিযোগ করেছি।
ঙাঁফাখুম পাড়া বাসিন্দা বিজয় মানিক ত্রিপুরা কারবারী ৫৫ বলেন, পর্যটক এলাকা নাফাখুং ঝর্ণা পাশে ২০১৯ সালে নাফাখুং পাড়া নামে গড়ে উঠে ৩২ টি পরিবারে একটি গ্রাম। গ্রামটিকে ও উচ্ছেদে হুমকি দিয়ে পায়তারা করে চলেছে হেডম্যান অংসাথুই মারমা। গ্রামে পার্শ্বে সমতল জায়গা প্রায় ৩০ একর জায়গা ও তার নামে না দিলে কাউকে গ্রামে থাকতে দেবে না বলেও হুমকি দেয় তিনি। এছাড়াও আমাকে কারবারী নিয়োগ করবেন বলে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছেন আমি ৩০ হাজার নগদ দিয়েছি। টাকার দেয়া তিন বছর হয়েছে আমাকে এখন ও নিয়োগ পত্র দেয়া হয়নি। এছাড়াও আমার ছেলে মেয়েকে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ পত্র দেন নি তাই ভোটার তালিকা অন্তুর্ভূক্ত করার সম্ভব হয়নি ছেলেমেয়েদের।
রুনাজন পাড়া বাসিন্দা হানারাং ত্রিপুরা ৪৫ বলেন, আমি ১৭ বছর পাড়ার কারবারী হিসেবে পাড়ার পরিচালনা করে আসছি কিন্তু আমাকে এবং পাড়াবাসীদের না জানিয়ে সূজন নামে অন্য একজনকে কারবারী নিয়োগ বানিজ্য করে আমার মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন হেডম্যান সাহেব। কামছি পাড়া বাসিন্দা সাবেক তিন্দু ইউপি মেম্বার অংছেন খুমি বলেন, আমাদের পাড়ার থেকে ৪৪ পরিবার থেকে অনেক টাকা দিয়েছি তিন বছর হলো কাউকে বন্দোবস্ত করে দেননি। অংসাথুই হেডম্যানের ছোট ভাই সুশিল সমাজের নাগরিক থোয়াইসিংমং মারমা বলেন, আমি গত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম,আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মৌজাবাসীদের পাহাড় সমান অভিযোগ থাকায় আমাকে অল্পভোটে হারতে হয়েছে। আমার ভাই হেডম্যান নিজেকে বাঁচানোর জন্য ইতিমধ্যে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েছে। ছাংওডং পাড়া ঘটনার ম্রো সম্প্রদায় ও মারমা সম্প্রদায় মধ্যে এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনে সংঘর্ষ বাঁধতে পারে। গত মাসে সংঘর্ষ হয়েছিল তখন তিন জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে হয়েছে। হেডম্যান হিসেবে তার মৌজা পরিচালনা যোগ্যতা দেখছি না।
যোগাযোগ করা হলে ৩৬৮ নং মিবক্যা মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা বলেন, আমার বিরুদ্ধের জেলা প্রশাসক কর্তৃক অভিযোগ গুলি সম্পূর্ন মিথ্যা বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক করা হয়েছে।
What's Your Reaction?